চট্টগ্রাম মহানগরীর কালুরঘাট বিএফআইডিসি রোডে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) জায়গায় নির্মাণাধীন ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার’ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। দ্রুত এখানে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করবে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। অপারেশনাল কার্যক্রম বলতে এ সেন্টারে মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তরদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে প্রকল্পের উপ পরিচালক (উপসচিব) মো. মিজানুর রহমান বলেন, পুরো প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে যতগুলো সেন্টার আছে তার মধ্যে সবার শেষে কাজ শুরু হয় চট্টগ্রামে। ওই হিসেবে এখন যতটুকু কাজ হয়েছে তার অগ্রগতি অনেক। কাজ প্রায় শেষ। ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। সেটাও শেষ পর্যায়ে। লিফটের কাজ বাকি আছে। লিফট এখনো অবশ্য আসেনি।
তিনি বলেন, অপারেশনাল কার্যক্রম (শ্রেণি কার্যক্রম) যত দ্রুত করা যায় তার চেষ্টা করছে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। তবে সেন্টারে প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে তারা বাইরে ল্যাব ভাড়া করে কার্যক্রম চালাচ্ছে। সেন্টার চালু হলে এখন যেগুলো বাইরে হচ্ছে তা সেন্টারে নিয়ে আসা হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হলে এসএসসি ও এইএসসি পর্যায়ে ছাত্রছাত্রীদের আইটিতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার মাধ্যমে মানব সম্পদ উন্নয়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা, একাডেমিয়া বা আইটি ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে সেতুবন্ধন এবং আইটি–আইটিইএস সম্পর্কিত খাতে দেশের যুব সমাজের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে এ ট্রেনিং সেন্টার।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। ৫২২ কোটি ৫৪ লাখ ৯২ হাজার টাকায় অনুমোদিত প্রকল্পের আওতায় ৮টি জেলা তথা চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, নাটোর, বরিশাল, মাগুরা, নেত্রকোণা ও রংপুর জেলায় সেন্টারটি নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত ছিল প্রকল্পে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর প্রকল্পের ব্যয় ৫৩৩ কোটি ৫৪ লাখ ৯২ হাজার টাকায় উন্নীত করে অনুমোদন দেয় একনেক। এতে প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।
মূল প্রকল্পটির আওতায় চট্টগ্রামেও আইসিটি (তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি) খাতে দক্ষ জনশক্তি ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে চসিকের ৪ দশমিক ৮৩ জায়গায় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার নির্মাণে অবকাঠামোগত কাজ শুরু হয়। এরপর একই বছরের ২৮ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। শুরুতে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৪৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। পরে তা বেড়ে প্রায় ৬০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টারটি হচ্ছে ৬ তলা ভবনের, যা সাড়ে ৩৫ হাজার বর্গফুটের। ২ তলা একটি কেন্টিন ও একটি ৫০০ কেভিএ সাবস্টেশন নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে প্রকল্পের আওতায়। এছাড়া ২টি লিফট স্থাপন, কম্পিউটার যন্ত্রাংশ ও আসবাবপত্র ক্রয়, ৫০০ কেভিএ জেনারেটর সরবরাহ ও স্থাপন, ফাইবার অপটিক কানেকটিভিটি স্থাপন এবং এসি কেনার কথা প্রকল্পের আওতায়।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, বিএফআইডিসি রোডে সিটি কর্পোরেশনের ১১ দশমিক ৫৫১ জায়গা রয়েছে। পুরো জায়গায় পূর্ণাঙ্গ হাইটেক পার্ক গড়ে তোলার কথা। এ লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ১১ মার্চ সিটি কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। চুক্তির আওতাভুক্ত জায়গার মধ্যেই শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টারটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০২০ সালে এ সেন্টার নির্মাণে সিটি কর্পোরেশন থেকে দুই একর জায়গা বুঝে নেয় হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ।
চসিকের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী, হাইটেক পার্ক নির্মাণে সম্পূর্ণ অর্থ ব্যয় করবে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। তিন বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা নির্মাণ কাজ। লভ্যাংশ চসিক ও হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ৫০ শতাংশ করে পাবে।
আপনার মতামত লিখুন : :