রোজা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ওপর পবিত্র রমজান মাসের রোজা ফরজ করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, রমজান মাস—যে মাসে কোরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য (আদ্যোপান্ত) হিদায়াত এবং এমন সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি সংবলিত, যা সঠিক পথ দেখায় এবং (সত্য ও মিথ্যার মধ্যে) চূড়ান্ত ফয়সালা করে দেয়। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই এ মাস পাবে, সে যেন এ সময় অবশ্যই রোজা রাখে।
আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে, তবে অন্য দিনে সে সমান সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের পক্ষে যা সহজ সেটাই চান, তোমাদের জন্য জটিলতা চান না, এবং (তিনি চান) যাতে তোমরা রোজার সংখ্যা পূরণ করে নাও এবং আল্লাহ তোমাদেরকে যে পথ দেখিয়েছেন, সে জন্য আল্লাহর তাকবির পাঠ করো এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৫)
এই আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য পূর্ণ রমজান মাস রোজা রাখা ফরজ করে দিয়েছেন। অবশ্য যারা সফর অথবা তীব্র অসুস্থতায় রোজা রাখতে অক্ষম হবে, তাদের জন্য পরে কাজা করার সুযোগ রাখা হয়েছে।
আবার যারা অতি বৃদ্ধ, রোজা রাখার শক্তি নেই এবং ভবিষ্যতে রোজা রাখার মতো শক্তি ফিরে আসারও কোনো আশা নেই, তাদের জন্যও রাখা হয়েছে ফিদিয়ার ব্যবস্থা। কিন্তু এর বাইরে রোজা ত্যাগ করার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি।
শরিয়ত সমর্থিত কোনো ওজর ছাড়া রোজা ত্যাগ করা আল্লাহর বেঁধে দেওয়া সীমানা অতিক্রম করার নামান্তর। অথচ মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে রোজার বিধি-বিধান সংক্রান্ত আয়াতে বলেছেন, ‘এসব আল্লাহর (নির্ধারিত) সীমা।
সুতরাং তোমরা এগুলোর নিকটে যেয়ো না। এভাবে আল্লাহ মানুষের সামনে স্বীয় নিদর্শনাবলি স্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৭)
অতএব, কোনো মুসলমান ইচ্ছাকৃত রোজা ত্যাগ করতে পারে না। এটা জঘন্যতম অপরাধ। হাফিজ ইমাম যাহাবি (রহ.) বলেছেন : ‘মুমিনদের কাছে এটা স্থির সত্য যে কেউ যদি বিনা অজুহাতে, বিনা অসুস্থতায় এবং কোনো বৈধ কারণ ছাড়াই রমজানের রোজা ছেড়ে দেয়, তবে সে ব্যভিচারী, ঘুষখোর আর মদ্যপানে অভ্যস্ত ব্যক্তির চেয়েও নিকৃষ্ট; বরং তার ঈমান আছে কি না, সে ব্যাপারেও সন্দেহ হয়। তাকে দেখে মনে হয়, সে জিন্দিক কিংবা ধর্মদ্রোহী হয়ে গেছে।’ (আল-কাবায়ির, পৃষ্ঠা-৬৪) নাউজুবিল্লাহ। রোজা ত্যাগ করার শাস্তি যে কতটা ভয়াবহ হবে, তা আমাদের নবীজি (সা.)-কে স্বপ্নযোগে দেখানো হয়েছে। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, আবু উমামা বাহেলি (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘একদা আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, এমন সময় (স্বপ্নে) আমার কাছে দুই ব্যক্তি উপস্থিত হলেন। তাঁরা আমার উভয় বাহুর ঊর্ধ্বাংশে ধরে আমাকে এক দুর্গম পাহাড়ের কাছে উপস্থিত করলেন এবং বললেন, ‘আপনি এই পাহাড়ে চড়ুন।’ আমি বললাম, ‘এ পাহাড়ে চড়তে আমি অক্ষম।’ তাঁরা বললেন, ‘আমরা আপনার জন্য চড়া সহজ করে দেব।’ সুতরাং আমি চড়ে গেলাম।
অবশেষে যখন পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে পৌঁছলাম তখন বেশ কিছু চিৎকার-ধ্বনি শুনতে পেলাম। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ‘এ চিৎকার-ধ্বনি কাদের?’ তাঁরা বললেন, ‘এ হলো জাহান্নামবাসীদের চিৎকার-ধ্বনি।’ পুনরায় তাঁরা আমাকে নিয়ে চলতে লাগলেন। হঠাৎ দেখলাম একদল লোক তাদের পায়ের গোড়ালির ওপর মোটা শিরায় (বাঁধা অবস্থায়) ঝুলানো আছে, তাদের গাল ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে এবং চোয়াল বেয়ে রক্তও ঝরছে। নবী (সা.) বলেন, আমি বললাম, ‘ওরা কারা?’ তাঁরা বললেন, ‘ওরা হলো তারা, যারা সময় হওয়ার পূর্বেই ইফতার করে নিত।’ (ইবনে খুযাইমাহ : ১৯৮৬, ইবনে হিব্বান : ৭৪৯১, হাকেম : ১৫৬৮, সহীহ তারগিব : ১০০৫, ২৩৯৩)
নাউজুবিল্লাহ, প্রত্যেক মুসলমানের চিন্তা করা উচিত যদি সময়ের আগে ইফতার করে ফেলার শাস্তি এতটা ভয়াবহ হয়, তাহলে এটা পরিপূর্ণ ত্যাগ করার শাস্তি কতটা ভয়াবহ হবে? মহান আল্লাহর রোজার পুরস্কার যেমন অনেক বড় ঘোষণা করেছেন, তেমনি যারা তা ত্যাগ করবে তাদের শাস্তিও নিশ্চয়ই সে রকম ভয়াবহ হবে।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে রোজার প্রতি যত্নবান হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আপনার মতামত লিখুন : :