আলোচিত সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক মো. ইমরান হোসেন। তিনি বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতিও বটে। জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিষিদ্ধ ব্রাহমা গরু আমদানি, বিক্রি ও দায়িত্বে অবহেলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার আসামি।
সাধারণত দুর্নীতির মামলা হলে অনেকে ভয়ে পালিয়ে থাকে বা আদালত থেকে জামিন নেন। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সময় দুর্দান্ত প্রতাপ দেখানো ইমরান বর্তমান সময়েও প্রভাব খাটিয়ে বাধাহীনভাবে জামিন ছাড়াই গতকাল (৩০ ডিসেম্বর) দুদকের কার্যালয় ঘুরে গেলেন। তাও নিজের মামলার তদবির করতে এসেছেন বলে দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র জানিয়েছেন।
অবাক করা বিষয় হচ্ছে দুর্নীতির মামলার আসামি হলেও তাকে গ্রেপ্তার করার কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বরং গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে বীরদর্পে বলে গেলেন, ‘আমার এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম’।
পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. ইমরান হোসেন বলেন, দুদক মামলা করলেও আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়নি। আমার নামে মামলা হবে আর আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেবে না, এটা তো হতে পারে না। আমি আজকে এসেছি আমার এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে। আমাকে তদন্তকারী কর্মকর্তা ডাকে নাই। আমার নামে যেহেতু চার্জশিট হয়নি, তাই জামিন নেইনি।
অন্যদিকে দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অনুসন্ধানে দুর্নীতির সম্পৃক্ততা পাওয়ার পর কমিশনের অনুমোদনক্রমে মামলা হয়। মামলার পর আসামি গ্রেপ্তার হওয়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। অনুসন্ধানকালে সাদিক অ্যাগ্রো থেকে আমদানি নিষিদ্ধ গরু জব্দ করে দুদক। সেখানে এজাহারভুক্ত আসামি জামিন না নিয়েই দুদকে আসার ঘটনা দুঃসাহসিক।
দুদক সূত্রে জানা যায়, মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে সোমবার বিডিএফএ এর নেতারা ও সদস্যদের দুদক কার্যালয়ে ডাকা হয়েছিল। আমদানি নিষিদ্ধ ব্রাহামা জাতের গরু আমদানি করা হয়েছিল। এসব বিষয়ে আলোচনার মধ্যেই তদন্ত কর্মকর্তা ও সাক্ষিদের সামনে হাজির হন ইমরান হোসেন। সেখানে তিনি বেশ কিছু সময় অবস্থান করার পর বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ইমরান দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে বের হন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্ত চলমান আছে, এটুকু জানি। বিস্তারিত তথ্য জানতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে বলতে পারবো।
গত ১৬ জুলাই দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিষিদ্ধ ব্রাহমা গরু আমদানি, বিক্রি ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের দুই পরিচালক এবং সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেনসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। মামলার আসামিরা হলেন কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের পরিচালক ডা. মো. মনিরুল ইসলাম, পরিচালক (উৎপাদন) ডা. এ বি এম খালেদুজ্জামান, গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের বায়ার অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার (লিভ রিজার্ভ) ডা. ফিরোজ আহমেদ খান, উপ-পরিচালক (লিভ/রিজার্ভ ট্রেনিং অ্যান্ড রিজার্ভ পদ) ডা. এ বি এম সালাহ উদ্দিন, সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক মো. ইমরান হোসেন এবং ইমরানের বন্ধু তৌহিদুল আলম জেনিথ। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪২০/৪০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ ৫(২) ধারায় মামলা হয়।
নিষিদ্ধ ১৫টি ব্রাহমা জাতের গরুসহ ৪৪৮টি গবাদিপশু কোনো ধরনের নিলাম ছাড়া সাদিক অ্যাগ্রোর মাধ্যমে জবাই করে ৬০০ টাকা কেজি দরে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে বিক্রি, গোপনে ব্রাহমা গরু বিক্রি ও গরুর সিমেন বিক্রিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে গত ২, ৩ ও ৪ জুলাই সাদিক অ্যাগ্রোর মোহাম্মদপুর, সাভার, নরসিংদী ও খামারবাড়ি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে অভিযান চালায় দুদক টিম। অভিযানে অধিকাংশ অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে বলে জানা গেছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের ১৮টি গরু আমদানি করেছিল সাদিক অ্যাগ্রো। কাস্টমস বিভাগ বিমানবন্দরে সেই গরু জব্দ করে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে গরুগুলো প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে দেওয়া হয়। পরে সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে গরুগুলো কৌশলে নিজের কাছে নিয়ে নেন।
ছাগলকাণ্ডে আলোচিত এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ১৫ লাখ টাকা মূল্যের একটি ছাগল সাদিক অ্যাগ্রো থেকে কিনে এক লাখ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করেছিলেন। পরে বিষয়টি নিয়ে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে ছাগলটি আর ওই খামার থেকে নেননি। এ ঘটনার পর সাদিক অ্যাগ্রো নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। পরে অবৈধভাবে খাল ও সিটি কর্পোরেশনের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা সাদিক অ্যাগ্রোর খামার ভেঙে দেয় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন।
আপনার মতামত লিখুন : :