শীত চলে গেলেও পুরোদমে শুরু হয়নি গরম। এখন এমন এক সময়, যখন প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঘটে শরীর ও মনের পরিবর্তন। আবহাওয়ার এই পরিবর্তন অনেক সময় শরীরের জন্য এক নতুন ধাক্কা বয়ে আনে। এলার্জি, সর্দি-জ্বর, হজমের সমস্যা, ক্লান্তি কিংবা মানসিক অবসাদ সব মিলিয়ে এই সময়টা হতে পারে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তবে কিছু সচেতনতা আর যত্নে এই বদলে যাওয়ার সময়টাও হয়ে উঠতে পারে প্রাণবন্ত।
প্রকৃতির মতো আমরাও বদলাই ঋতুর ছন্দে। তবে এই বদল যেন বিপর্যয় না হয়ে আসে, তার জন্য চাই প্রস্তুতি আর সামান্য সচেতনতা। ঋতুর বদলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গড়ে তুলি সুস্থ জীবনযাত্রার নতুন পথ। মনে রাখুন প্রকৃতি আমাদের শিখিয়ে দেয় রূপান্তরের সৌন্দর্য, আর আমরা শিখি তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাঁচতে।
আবহাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাবারে পরিবর্তন
এই সময় প্রচণ্ড গরম পড়ে না, আবার শীতও একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। ফলে হজমে সমস্যা, পানিশূন্যতা বা অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত তেল-ঝাল বাদ দিয়ে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন শাকসবজি, লেবুজাতীয় ফল, দই, ডাবের পানি। ঠান্ডা বা বরফমিশ্রিত পানীয় এড়িয়ে চলাই ভালো।
নিয়ম করে পানি পান করুন
আবহাওয়ার এই ধোঁয়াশা সময়ে ঘাম বেশি না হলেও শরীর থেকে ধীরে ধীরে পানি বেরিয়ে যায়। তাই নিজেকে হাইড্রেটেড রাখুন সবসময়। নিয়মিত পানি পান শরীরকে সতেজ রাখে, রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
জামাকাপড়েও চাই পরিবর্তন
শীতকালীন মোটা জামাকাপড় সরিয়ে দিন, তবে একেবারে হালকাও নয়। সন্ধ্যার দিকে ঠান্ডা অনুভব হতে পারে, তাই সঙ্গে পাতলা কিন্তু গরম জামা রাখুন। গরমে ঘাম হলে সেই জামা যেন আরামদায়ক হয়, সেদিকে খেয়াল রাখাও জরুরি।
ত্বকের যত্নে রাখুন বাড়তি নজর
এই ঋতুতে বাতাস কখনো শুষ্ক, আবার আর্দ্র। ফলে ত্বকে র্যাশ, ব্রণ কিংবা রুক্ষতা দেখা দেয়। হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, মাঝেমধ্যে মুখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিন। সানস্ক্রিন ব্যবহার না করলে রোদে পোড়া সমস্যা বাড়বে। তাই রোদে বের হলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
সুস্থ থাকতে প্রয়োজন বিশেষ সতর্কতার
ঋতুর পরিবর্তনের সঙ্গে ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণও বাড়ে। তাই ঘুম ঠিক রাখা, নিয়মিত হালকা ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার আর কিছুটা সময় প্রকৃতির সঙ্গে কাটানো; এসবই আপনাকে সতেজ রাখতে সাহায্য করবে।
মানসিক স্বাস্থ্যকেও দিন অগ্রাধিকার
মৌসুমি বিষণ্নতা বা ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে আসা ‘মুড সুইং’ এখন আর অজানা নয়। শরীরের ক্লান্তি, হরমোনের পরিবর্তন বা আবহাওয়ার প্রভাবে মন খারাপ লাগা স্বাভাবিক। তাই নিজেকে সময় দিন। গান শুনুন, বই পড়ুন, হালকা হাঁটুন, ঘরের গাছগুলোর যত্ন নিন।
শিশুর যত্নে বাড়তি সতর্কতা
ঋতু পরিবর্তনের এই সময় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে শিশুরা। হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তন তাদের ঠান্ডা-জ্বর, কাশি বা অ্যালার্জিতে আক্রান্ত করতে পারে। তবে এই একটু সতর্ক হলেই এ ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। এসময় শিশুদের কুসুম গরম পানি খাওয়ানো ও গোসল করানো নিরাপদ। তাদের ঠান্ডা খাবার বা আইসক্রিম থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন। ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ ফল (যেমন-কমলা, মাল্টা কিংবা আমলকী) দিতে পারেন নিয়মিত। সকালের রোদে শিশুদের বাইরে খেলতে দিন। এতে শরীরে ভিটামিন ‘ডি’ তৈরি হয়, যা রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
বয়স্কদের যত্নেও চাই বিশেষ মনোযোগ
এই সময় শিশুদের পাশাপাশি ঝুঁকিতে থাকেন বয়স্করাও। কারণ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ঋতু পরিবর্তনের ফলে খুব সহজেই নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারেন তারা। তাই এ সময় বয়স্কদের যত্নে একটু বেশি সতর্ক থাকা জরুরি। যারা হাঁপানি, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস কিংবা বাতের রোগে আক্রান্ত তাদের সব সময় চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা উচিত।
ঘরেও চাই সতেজ পরিবেশ
এই সময় ঘরে যেন বাতাস চলাচল করে, সেজন্য জানালা খুলে রাখুন দিনে কিছুটা সময়। বিছানার চাদর, পর্দা বা কভার ধুয়ে নিন। ধুলাবালির কারণে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন : :