ঢাকা : দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী। তিনি ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতির দায়িত্ব পালনেও রেখেছেন দক্ষতার ছাপ।
শেয়ার ব্যবসায় ৩০ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এই ব্যবসায়ী নেতা বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেছেন সোনালীনিউজের সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে আলাপচারিতায় ছিলেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসাইন সোহেল-
সোনালীনিউজ : করোনা পরবর্তীতে শেয়ার বাজার কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
শাকিল রিজভী : করোনা মহামারীর কারণে লকডাউনের পরবর্তীকালে যতটা হতাশা ছিল তার চেয়ে ভালো পারফর্মেন্স করেছে মার্কেট। এই সময় মার্কেটে ৪,১০০ থেকে ৫,০০০ পর্যন্ত ইনডেক্স উঠেছে। এখন ৪,৮০০ মতো আছে। আমাদের আশপাশের দেশের তুলনায় করোনা পরবর্তীকালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পারফর্মেন্স অনেকটা ভালোছিল। করোনাকালে মার্কেট দুই মাস বন্ধ থাকায় একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। তারপরও আমাদের মার্কেট মোটামুটি ভাবে বলা যায় যে, একটা ভালো অবস্থায় আছে।
সোনালীনিউজ : নতুন কমিশন যে উদ্যোগগুলো নিয়েছেন একজন স্টেকহোল্ডার হিসেবে আপনি কীভাবে দেখছেন?
শাকিল রিজভী : নতুন কমিশন এবং চেয়ারম্যান অনেক চেষ্টা করছেন, তাদের অনেকগুলো উদ্যোগ ইতোমধ্যে মার্কেট যে ফ্লোরপ্রাইজে আটকে ছিল সেখান থেকে উঠে এসেছে। মার্কেটে অনেক নতুন বিনিয়োগকারী আসছেন। ভালো কিছু পজেটিভ ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে মার্কেটে এবং বড় আইপিও রবি’র আবেদন শেষ হয়েছে। যা প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। এটা করোনা উত্তোরকালে একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল যা নতুন কমিশন আসার ফলে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। একথায় বলতে গেলে মার্কেটকে গতিশীল ও স্বাভাবিক করতে নতুন কমিশন যথেষ্ট কাজ করছেন।
সোনালীনিউজ : শেয়ারবাজার কারসাজি বন্ধে কি কি উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন?
শাকিল রিজভী : শেয়ারবাজার কারসাজি বিভিন্ন সময় হয়ে থাকে। এটা কোনো দিনই পুরোপুরি বন্ধ হয় না। স্টক মার্কেটের সাথে এটি চলতেই থাকে। যিনি বা যারা করেন তাদের উপযুক্ত শাস্তি হয়ে থাকে এবং এভাবে চলছে। যদি কেউ কারসাজি করে থাকে এটা হয়তো তাৎক্ষণিক বিচার হয় না। পরে তদন্তের মাধ্যমে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এক বছর পরে হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সুতরাং শেয়ারবাজার কারসাজির বিচার হয় এবং হচ্ছে। সামনে এই বিচার ব্যবস্থাকে আরো গতিশীল করা হবে।
সোনালীনিউজ : ডিএসই’র কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনের দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ যুক্ত হওয়ার পরে কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন আসছে কি না?
শাকিল রিজভী : প্রথমত বাংলাদেশের মত একটি দেশের স্টেটিজিক পার্টনার পাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল স্টক একচেঞ্জের। সুতরাং আমরা যে দুটি বড় স্টক এক্সচেঞ্জকে সংযুক্ত করতে পেরেছি সেটাই আমাদের জন্য একটি বড় অর্জন। বর্তমানে পৃথিবীর ১০টি বড় স্টক এক্সচেঞ্জের দুটি আমাদের সঙ্গে সংযুক্ত শেনজেন ও সাংহাই। এখন এদুটি স্টক এক্সচেঞ্জের আমাদের শেয়ারবাজারে ২৫ শতাংশ মালিকা রয়েছে। এবং তাদের থেকে আমাদের যে কারিগরী সহযোগীতা নেয়ার কথা সেটা প্রক্রিয়াধীন আছে। কারণ আমাদের বর্তমান প্লাটফর্ম আছে সেটার মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২০২৩ সালে, তার আগে আমরা সেটা পরিবর্তন করতে পারবো না। সুতরাং এটা প্রক্রিয়াধীন আছে, বাকি যে ধাপগুলো আছে সেগুলো আমরা পর্যায় ক্রমে পাবো।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী
সোনালীনিউজ : তালিকাভুক্ত কিছু কোম্পানি সহযোগী কোম্পানিদের বিনাসুদে লোন দিচ্ছে। এতে করে পরিচালকরা লাভবান হলেও ঠকছেন সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা। এটি বন্ধে কী করণীয়?
শাকিল রিজভী : তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো যদি তার টাকা অন্য কাউকে লোন দেয় তাতে অবশ্যই ইন্টারেস্ট থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে এফডিআর অথবা ব্যাংকে রাখলেও তো ইন্টারেস্ট পেত। টাকা যদি লিস্টেড কোম্পানির ওই গ্রুপের অন্য কোন কোম্পানিকে দেয়া হয় বিনা সুদে সেটা অযুক্তিক ও আইন সম্মত নয়। এক্ষেত্রে পরিচালকদের ওপর আস্থা হারাবেন বিনিয়োগকারীরা, শেয়ারহোল্ডাররাও লোকসানের মুখে পড়বেন।
সোনালীনিউজ : সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে ডিএসই’র মুনাফায় ৭২ শতাংশ কম হওয়ার কারণ কি?
শাকিল রিজভী : ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মুনাফা কমার কারণ হলো দুই মাস কোনো ট্রেডিং হয়নি। তার আগেও যে ১০ মাস ট্রেড হয়েছে সেখানেও ট্রেডিংয়ের পরিমান অনেক কম ছিল। তাছাড়া ২০১৯ সালের শেষ দুই মাস নভেম্বর-ডিসেম্বর এবং জানুয়ারিতে লেনদেনের পরিমান অনেক কম ছিল। ডিএসই’র মুনাফা বাড়াতে হলে দৈনিক লেনদেন বাড়াতে হবে। লেনদেন কম হওয়ায় লাভ কম হয়েছে। এখন আবার কর্পোরেট টেক্স যুক্ত হয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জে আগে ডিমিউচুয়ালাইজেশনের (ব্যবস্থপনা থেকে মালিকানা পৃথকীকরণ) ফলে এখন কর্পোরেট টেক্স প্রবিশনিং করতে হয়। আগে কিন্তু এমনটা ছিল না। যেকারণে মুনাফা কম হয়েছে।
সোনালীনিউজ : বিনিয়োগকারীদের প্রতি আপনার পরামর্শ কি?
শাকিল রিজভী : বিনিয়োগকারীদের বা যে কোনো ব্যবসাই শুরু করুক না কেন সেই ব্যাপারে যথেষ্ট ধারণা নেওয়া উচিৎ। এক্ষেত্রে কেন বিনিয়োগ করতে আসলাম এটা থেকে কি লাভ-ক্ষতি হবে তা ভালোভাবে জেনে বুঝে আসা দরকার। তা না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর শেয়ারবাজার সব সময় ঝুঁকিপূর্ণ বাজার, এখানে লাভও আছে, লসও আছে। এক্ষেত্রে কিছু কিছু টার্মলজি বুঝে তারপর আপনি বিনিয়োগ করুন। এটা এফডিআরের মতো ফিক্সড ইনকাম না। কোম্পানি ভালো করলে শেয়ারের দাম বাড়ে আবার কোম্পানি খারাপ করলে শেয়ারের দাম কমে। দেশের সার্বিক অর্থনীতি ও রাজনীতিসহ অনেকগুলো ফেক্টর এখানে কাজ করে এই শেয়ারের দামের ওপর, সুতরাং না জেনে না বুঝে শেয়ারবাজারে আসাটা ঠিক না।
আপনার মতামত লিখুন : :