কয়েক দশক ধরে উন্নত রাষ্ট্রে অভিবাসন প্রত্যাশীদের জন্য নির্ভরযোগ্য এক গন্তব্য কানাডা। অভিবাসন খাতে উদারনীতির জন্য বিশ্বব্যাপী উন্মুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে উত্তর আমেরিকার দেশটি। কিন্তু এবার সেই অবস্থান থেকে অনেকটা দূরে সরে আসছে কানাডিয়ান সরকার। আশঙ্কাজনকভাবে বেকারত্ব বেড়ে যাওয়া অভিবাসন নীতিতে কঠোর হতে যাচ্ছে তারা।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) নিজেদের ইতিহাসে এ যাবতকালের সবচেয়ে কঠোর অভিবাসন কাটব্যাক উপস্থাপন করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং অভিবাসনমন্ত্রী মার্ক মিলার। নতুন সিদ্ধান্তে ২০২৫ সাল নাগাদ দেশটিতে স্থায়ীভাবে বাস করতে আসা মানুষের হার ২১ শতাংশ কমানোর কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ এতদিন স্থায়ী বাসিন্দাদের লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ লাখ থাকলেও ২০২৫ সালে তা তিন লাখ ৯৫ হাজারে নামিয়ে আনা হবে। খবর বিবিসির।
শুধু স্থায়ী অভিবাসন নয়, অস্থায়ী অভিবাসনের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের কাটছাঁটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কানাডার সরকার। এক্ষেত্রে অস্থায়ী বিদেশি কর্মীদের পাশাপাশি বিপাকে পড়ে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরাও। মূলত, জনসংখ্যা বৃদ্ধি থামানোর প্রচেষ্টা হিসেবেই অভিবাসন নীতিতে এ পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ট্রুডো সরকার।
১৯৭৭ সাল থেকে দেশে অভিবাসনের প্রতি কানাডিয়ানদের মনোভাব কেমন, তা পর্যবেক্ষণ করে আসছে এনভায়রনিক্স ইন্সটিটিউট নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সবশেষ চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের জরিপ থেকে জানা যায়, গত ২৫ বছরে প্রথমবারের মতো ৫৮ শতাংশ মানুষ বলেছে যে দেশটিতে অভিবাসনের সংখ্যা এখন অনেক বেড়ে গেছে। এর অন্যতম কারণ আবাসন সংকট।
অভিবাসনের তুলনায় আবাসন সীমিত হয়ে পড়ায় স্থানীয় কানাডিয়ানরা বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন। একই সময়ে কানাডার বেকারত্বের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশ এবং তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ শতাংশ।
এসবের পাশাপাশি অর্থনীতি, অতিরিক্ত জনসংখ্যা এবং অভিবাসন ব্যবস্থা কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে, সেটাও মানুষের মনোভাব পরিবর্তনের বড় কারণ।
ট্রুডো এবং তার সরকার জনসেবা বা আবাসন নির্মাণ না করেই অভিবাসনের হার বাড়ানোয় সমালোচিত হয়েছে এবং অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন যে কানাডার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা আবাসন এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো জনসেবা খাতগুলোর উপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করবে।
২০১৫ সালে জাস্টিন ট্রুডো কানাডার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার সরকার বার্ষিক স্থায়ী বাসিন্দার লক্ষ্যমাত্রা দুই লাখ ৭২ হাজার থেকে বাড়িয়ে চার লাখ ৮৫ হাজারে উন্নীত করে। তবে কোভিড-১৯ মহামারির পরে ২০২১ সালে অভিবাসনের হার সবচেয়ে বেশি বাড়তে দেখা গেছে।
কানাডিয়ান ব্যুরো ফর ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন অনুসারে, ২০২২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে।
এদিকে, সরকারি তথ্য অনুযায়ী কানাডায় অস্থায়ী বিদেশি কর্মীর সংখ্যা গত পাঁচ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। অভিবাসন নিয়ে কানাডিয়ানদের নেতিবাচক ধারণার আরেকটি বড় কারণ, তারা মনে করে কানাডার অভিবাসন ব্যবস্থা তার সততার জায়গা হারিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন : :