• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল, ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.

যে সময় ব্যায়াম করলে চর্বি দ্রুত কমবে


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | স্বাস্থ্য ডেস্ক এপ্রিল ৭, ২০২৫, ০৮:১৭ পিএম যে সময় ব্যায়াম করলে চর্বি দ্রুত কমবে

সকালে, দুপুরে বা সন্ধ্যা কোন সময়ে ব্যায়াম করে সবচেয়ে বেশি ভালো অনুভব করেন? কেউ বলবে সকালে ব্যায়াম করতে ভালোবাসেন। আবার কেউ সন্ধ্যাবেলা ব্যায়াম করার পর সবচেয়ে ভালো অনুভব করেন। তবে চর্বি কমানোর জন্য আসলেই কি কোনো নির্দিষ্ট সময় আছে? বিজ্ঞান কী বলে এবং এই সময়ের প্রভাব কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
জাপানের টেনরি ইউনিভার্সিটি’র করা গবেষণা অনুসারে, ব্যায়ামের সময় অবশ্যই শারীরিক ‘পারফরম্যান্স’ বা কর্মক্ষমতা, বিপাক এবং ‘চর্বি অক্সিডেইশন’ বা চর্বি পোড়ানোর প্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নিয়মিত ব্যায়াম চর্চা করা, তীব্রতা এবং ধারাবাহিকতা। সঠিক সময়ে ব্যায়াম না করলে চর্বি কমানোর পথে সফল হওয়া সম্ভব নয়। তাই, সঠিক সময় বেছে নেওয়ার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ হল নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং যথাযথ পরিশ্রম করা।
সকালে ব্যায়াম:
চর্বি কমানোর জন্য কার্যকর হতে পারে সকালে উঠে ব্যায়াম করা বহুল প্রচলিত পদ্ধতি। তবে সত্যিই কি এটা কার্যকর? যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ‘গ্যারেজ জিম রিভিউস’য়ের পুষ্টি-প্রশিক্ষক নিকোল ডেভিস ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “সকালে খালি পেটে ব্যায়াম করলে চর্বি অক্সিডেশন (চর্বি পোড়ানো) কিছুটা দ্রুত হতে পারে। কারণ রাতে খাবার না খাওয়ার কারণে গ্লাইকোজেনের স্তর কম থাকে। এতে শরীর স্টোর বা সংরক্ষিত চর্বিকে শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে। ফলে চর্বি পোড়ানোর প্রক্রিয়া আরও কার্যকর হয়।” তবে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সকালে ব্যায়াম তখনই কার্যকর হবে যদি তা রুটিনে মাফিক হয়। স্বাস্থ্যবিষয়ক মার্কিন ওয়েবসাইট ‘বারবেন্ড’য়ের প্রশিক্ষক স্টিফেন শিহান বলেন, “চর্বি কমানোর জন্য সেরা সময় হল সেই সময়, যখন সবচেয়ে বেশি নিয়মিতভাবে ব্যায়াম করা সম্ভব হবে।” যদি সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার মানুষ হন এবং সকালের ব্যায়ামে শক্তি পান, তবে এটি আদর্শ সময় হতে পারে। তবে সকালের ব্যায়ামে যদি দিনের স্বাভাবিক রুটিনকে বিঘ্নিত হয় বা কর্মক্ষমতা কমে তবে সন্ধ্যাবেলা ব্যায়ামও সমানভাবে কার্যকর হতে পারে।
দিনের শেষে ব্যায়াম:
সকালে ব্যায়াম করতে ভালো বোধ না করলে সন্ধ্যাবেলা ব্যায়াম হতে পারে একটি চমৎকার বিকল্প। গবেষণা বলছে, সন্ধ্যার দিকে শরীরের তাপমাত্রা, পেশির কার্যকারিতা এবং গ্রিপ শক্তি (হাত এবং আঙ্গুলের পেশির মাধ্যমে ধারণ ক্ষমতা) সাধারণত বেশি থাকে। এটি কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে ক্যালোরি পোড়ানোর পরিমাণও বাড়তে পারে। নিকোল ডেভিস বলেন, “সন্ধ্যাবেলা ব্যায়াম সাধারণত কর্মক্ষমতা এবং শক্তি প্রশিক্ষণে আরও কার্যকর। কারণ এই সময় শরীরের তাপমাত্রা এবং পেশির কার্যকারিতা আরও ভালো থাকে।” এর ফলে ব্যায়ামের সময় আরও বেশি পরিশ্রম করা যায়, যা ক্যালোরি পোড়ানোর পরিমাণ বাড়ায়। শিহান আরও বলেন, “সন্ধ্যাবেলা ব্যায়াম করলে দিনের মধ্যে সঞ্চিত ‘স্ট্রেস’ বা চাপও মুক্ত হয়। আর চর্বি কমাতে সাহায্য করে।” তবে বিভিন্ন গবেষণায় সাধারণত রাতে উচ্চ মাত্রার ব্যায়াম পরিহার করতে পরামর্শ দেয়। কারণ এটি ঘুমের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। সন্ধ্যাবেলা মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম করলে ভালো, যাতে রাতে ভালো ঘুমানো যায়। তবে ২০২২ সালে ‘ওবেসিটি’ সাময়িকীতে প্রকাশিত অস্ট্রেলিয়ার ‘দি ইউনিভার্সিটি অফ কুইন্সল্যান্ড’য়ের পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, সন্ধ্যাবেলার ব্যায়ামও চর্বি কমাতে কার্যকর হতে পারে। তবে আসল বিষয় হল- বিরতিতে ব্যায়াম, তীব্রতা এবং সময়ের মোট দৈর্ঘ্য কী ধরনের প্রভাব ফেলছে? স্টিফেন শিহান বলেন, “সকাল এবং সন্ধ্যা ব্যায়ামের মধ্যে বিপাকের প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম। বরং শরীরচর্চার তীব্রতা, সময় এবং ধারাবাহিকতা বেশি প্রভাব রাখে।” তিনি আরও বলেন, “দিনের কোনো সময়ে শরীরচর্চা করা হচ্ছে সেটার তুলনায় ব্যায়ামে পরিশ্রম হলে চর্বি কমানোতে বেশি প্রভাব রাখবে।” নিকোল ডেভিসও একমত হয়ে বলেন, “চর্বি কমানোর জন্য মোট ক্যালোরি পোড়ানো এবং ব্যায়ামের তীব্রতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সময়ের তুলনায়।”
চর্বি কমানোর জন্য অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
২০২১ সালে ‘নিউট্রিয়েন্টস’ জার্নালে প্রকাশিত একটি পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, “শরীরের হরমোন একটি বড় ভূমিকা পালন করে ব্যায়ামের সময় এবং চর্বি কমানোর কার্যকারিতায়।” তবে, হরমোনের প্রভাব কতটা বেশি? সকালে কর্টিসোল এবং টেস্টোস্টেরনের স্তর সাধারণত বেশি থাকে। যা চর্বি কমাতে এবং পেশি গঠনে কিছুটা সুবিধা দিতে পারে।
নিকোল ডেভিস বলেন, “কর্টিসোল শক্তি সরবরাহ করতে সহায়তা করে, যা সকালে ব্যায়াম করার সময় চর্বি পোড়ানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।” তবে, সন্ধ্যায় তীব্র মাত্রায় ব্যায়াম করলে ‘গ্রোথ হরমোন’ মুক্তি পায়। যা পেশি মেরামত এবং বিপাক প্রক্রিয়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
ডেভিস স্পষ্ট করেন যে, “হরমোনের পার্থক্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও, চর্বি কমানোর ক্ষেত্রে কোনও বড় বাধা নয়।”
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেল্থ’ জানাচ্ছে, ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে ক্যালরি কম গ্রহণ আর নিয়মিত ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তাই সময় সকাল হোক বা সন্ধ্যা, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ক্যালোরি ঘাটতি নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।

Side banner