• ঢাকা
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.
চুয়াডাঙ্গায় চক্ষু সার্জনের দায়িত্বহীনতা

চোখের অস্ত্রোপচার করতে আসা ১২ রোগীকে হয়রানির অভিযোগ


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪, ০৫:১৭ পিএম চোখের অস্ত্রোপচার করতে আসা ১২ রোগীকে হয়রানির অভিযোগ

চুয়াডাঙ্গা রেড ক্রিস্টেন্ট চক্ষু হাসপাতালে চোখের অস্ত্রোপচার করতে আসা ১২ রোগী হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় চক্ষু হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের জন্য এসে ডাক্তারের অপেক্ষায় থেকে অবশেষে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সকলে ফিরে যান। ফিরে যাওয়া রোগীরা হলেন, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার চাঁদনী ও সালেহার, সদর উপজেলার বোয়ালমারি গ্রামের আশানুর, খেজুরা গ্রামের আছিয়া খাতুন, দর্শনার রেহেনা খাতুন, আলমডাঙ্গা উপজেলার বলদিয়া গ্রামের নিগারন, জাহানারা, আসমানখালি গ্রামের হাজেরা, লক্ষ্মীপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী, মহেশপুর গ্রামের আজেরা খাতুন, আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার এরশাদপুরের আলেয়া ও দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর গ্রামের নূর হোসেন।
জানা গেছে, প্রতি শনিবার প্রত্যেক রোগীকে চার হাজার টাকার বিনিময়ে চোখের অস্ত্রোপচার করে থাকে চুয়াডাঙ্গা রেড ক্রিসেন্ট চক্ষু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের ফ্যাকো সার্জন না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চুক্তি করেন ঝিনাইদহ চক্ষু হাসপাতালে কর্মরত সার্জন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল হালিমের সাথে। ওই হাসপাতাল শুক্রবার ও শনিবার সপ্তাহে দুদিন ছুটি থাকে। তিনি চুয়াডাঙ্গা রেড ক্রিসেন্ট চক্ষু হাসপাতালে চুক্তি অনুযায়ী সপ্তাহের শনিবার অপারেশনের জন্য প্রত্যেক রোগী বাবদ ১ হাজার ৫শ টাকা নিয়ে থাকেন। সেই মোতাবেক বেশ কিছুদিন যাবত ডা. আব্দুল হালিম চুয়াডাঙ্গা রেড ক্রিসেন্ট চক্ষু হাসপাতালে অপারেশন করে আসছেন। গতকাল শনিবার চক্ষু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্থান েেক ১২ জন রোগীকে আসতে বলেন অস্ত্রোপচারের জন্য। হাসপাতালে সকাল ৯টার মধ্যে ১২ জন রোগী উপস্থিত হলে কর্তৃপক্ষ সকলকে চোখে ড্রপ দিয়ে ও লেন্স পরীক্ষাসহ অপারেশনের জন্য প্রস্তুত করেন। রোগীরা দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করার পরও ডা. আব্দুল হালিম চক্ষু হাসপাতালে আসেননি। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডা. আব্দুল হালিমের বাসভবন চুয়াডাঙ্গা উপশম নার্সিং হোমে খোঁজ নিতে যান। 
সেখানে কতর্ব্যরত এক স্টাফ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানান, তিনি স্বপরিবারে বেড়াতে গেছেন। এ কথা জানাজানি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছুটা বিব্রত বোধ করেন। এরপর অস্ত্রোপচারের জন্য আসা রোগী ও তার স্বজনদের বিষয়টি জানান। বিষয়টি রোগী ও তার স্বজনরা সহজভাবে নেয়নি। তারা ডাক্তারের এরকম কর্মকান্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
আলমডাঙ্গার গাংনী ইউনিয়নের শালিকা গ্রামের গোলাম রসুলের স্ত্রী ৬০ বছর বয়সী হাজেরা খাতুন। চুয়াডাঙ্গায় প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করেও তিনি এসেছেন চোখের অস্ত্রোপচার করতে। তার মেয়ে একই গ্রামের হুসনেরা আরা জানান, আমার মা বৃদ্ধা মানুষ। এই বয়সে তাকে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা রেড ক্রিসেন্ট চক্ষু হাসপাতালে সকাল ৯টায় পৌঁছায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চোখের ড্রপ দিয়ে,  লেন্স পরীক্ষাসহ অন্যান্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। এতে তাদের কোনো ঘাটতি ছিলো না। ডা. আব্দুল হালিম শনিবার উপস্থিত না থাকার বিষয়টি কেউই জানতেন না। শুনছি তিনি স্বপরিবারে সুন্দরবন বেড়াতে গেছেন। তবে ডাক্তার না থাকার বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা আমাদের চক্ষু হাসপাতালে আসতে নিষেধ করতেন। প্রচন্ড এই শীতের মধ্যে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ করে আমাদের আসার কোনো দরকার ছিলো না। ডাক্তারের কাউকে কিছু না বলে বেড়াতে যাওয়া উচিত হয়নি। উনি তো জানতেন শনিবার অপারেশন করা হবে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের বলদিয়া গ্রামের নিগারনের মেয়ে জানান, আমার মায়ের অপারেশনের জন্য চুয়াডাঙ্গা রেড ক্রিসেন্ট চক্ষু হাসপাতালে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করার পরও ডাক্তার না থাকায় ফিরে আসতে হয়েছে। দীর্ঘসময় অপেক্ষার পর জানতে পারি যে ডাক্তার অপারেশন করবেন উনি বেড়াতে গেছেন। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে এই শীতে আমরা বৃদ্ধা রোগীকে নিয়ে অপারেশনের জন্য সেখানে উপস্থিত হলাম অথচ ডা. আব্দুল হালিমের অনুপস্থিত। হাসপাতালে আসার আগে বিষয়টি জানলে এতো হয়রানি হতাম না।
ঝিনাইদহ কোটচাঁদপুরের সাবদারপুর ইউনিয়নের ৬৫ বছর বয়সী রেহেনা খাতুন প্রচন্ড ঠান্ডা উপেক্ষা করে এসেছিলেন চোখের অস্ত্রোপচার করাতে। তার সাথে ছিলেন পুতনি চুয়াডাঙ্গা দর্শনা বাসস্ট্যান্ডপাড়ার বাবলুর ছেলে জুয়েল। তিনি জানান, আমার দাদীকে নিয়ে চক্ষু হাসপাতালে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেও ডাক্তার না থাকায় ফিরে আসতে হয়েছে। তিনি শনিবার চুয়াডাঙ্গায় থাকবেন না বিষয়টি আমাদের আগে জানানো উচিত ছিলো।
চুয়াডাঙ্গা রেড ক্রিসেন্ট চক্ষু হাসপাতালে সুপারভাইজার শফিউল বাশার ও একাউন্টেন্ট আক্তার হোসেন জানান, ঝিনাইদহ চক্ষু হাসপাতালের সার্জন ডা. আব্দুল হালিমের সাথে আমারে চুক্তি রয়েছে। তিনি সপ্তাহের প্রতি শনিবার এখানে অপারেশন করে থাকেন। আমরা প্রত্যেক রোগীর কাছে অপারেশন ও অন্যান্য খরচ বাব ৪ হাজার টাকা নিয়ে াকি। আর ডা. আব্দুল হালিমকে ১ হাজার ৫শ টাকা রোগী প্রতি দিয়ে থাকি। শনিবারও ১২ জন রোগীকে অপারেশনের জন্য প্র¯‘ত করা হয়। দীর্ঘ সময় ডাক্তার না আসায় আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারি উনি চুয়াডাঙ্গার বাইরে বেড়াতে গেছেন। আসলে আমরা বিষয়টি জানতাম না। জানলে এখানে আসা রোগীদের বিষয়টি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আগেই জানিয়ে দিতাম। এ ব্যাপারে হাসপাতালের পক্ষ েেক দুঃখ প্রকাশ ছাড়া আর কিছু বলার নেই। এছাড়া অপারেশন করার জন্য নেয়া টাকা সকলকে ফেরত দেয়া হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা রেড ক্রিসেন্ট চক্ষু হাসপাতালের ইউনিট অফিসার ওবাইদুল ইসলাম পারভেজ জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে আপনাকে জানা”িছ।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ চক্ষু হাসপাতালের ফ্যাকো সার্জন ডা. আব্দুল হালিমের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

Side banner