• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ জানুয়ারি, ২০২৫, ২২ পৌষ ১৪৩১
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.

জাবিতে ২৪তম পাখি মেলা


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | হাবিবুর রহমান সাগর, জাবি প্রতিনিধি জানুয়ারি ৩, ২০২৫, ০৮:৪৭ পিএম জাবিতে ২৪তম পাখি মেলা

নানা প্রজাতির পাখির কূজন, জলকেলি ও ঝাঁক বেঁধে এদিক-সেদিক উড়াউড়ি এ সবই যেন এখন  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সোনালী অতীত। শীত মৌসুমে অতিথি পাখির প্রিয় গন্তব্যস্থল হিসেবে পরিচিত জাবি ক্যাম্পাস ক্রমেই হারাচ্ছে এর জৌলুস। প্রতি বছর ক্যাম্পাসে প্রায় তিন থেকে চার প্রজাতির পাখি দেখা যেত। তবে এ বছর তা ঠেকেছে দুই প্রজাতিতে। উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে পাখির সংখ্যাও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যাম্পাসে পাখির আবাসস্থলের জন্য পরিচিত লেকগুলোর পাশে অত্যধিক জনসমাগম, যানবাহনের শব্দ ও ক্যাম্পাসে যত্রতত্র ভবন নির্মাণের ফলে মুখ ফেরাচ্ছে অতিথি পাখি। 
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে প্রথম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরিযায়ী পাখি আসে। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০৬ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি ক্যাম্পাসের লেকগুলোতে দেখতে পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্যে ১২৬টি দেশি প্রজাতির। বাকিগুলো বিদেশি প্রজাতি। তবে এবার কেবল দুই প্রজাতির পাখি দেখা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা হাঁস জাতীয় অতিথি পাখির মধ্যে রয়েছে সরালি, পচার্ড, ফ্লাইফেচার গার্গেনি, ছোট জিরিয়া, পান্তামুখী, পাতারি, কোম্বডাক, পাতারি হাঁস, জলকুক্কুট, খয়রা ও কাম পাখি অন্যতম। এছাড়া মানিকজোড়, কলাই, ছোট নগ, জলপিপি, নাকতা, খঞ্জনা চিতা টুপি, লাল গুড়গুটি, বামুনিয়া হাঁস, নর্দার্নপিনটেল ও কাস্তে চাড়া প্রভৃতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংরক্ষিত এলাকা ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের লেক ছাড়া পরিবহন চত্ত্বর সংলগ্ন লেক, আল-বেরুনি হল ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল সংলগ্ন লেক, পুরনো প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন লেকে পূর্বে অতিথি পাখি দেখা গেলেও এবার তেমন দেখা নেই। এক্ষেত্রে যথা সময়ে লেক পরিষ্কার করা, কোলাহল নিয়ন্ত্রণ করে পাখির নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত করা গেলে পুনরায় লেকগুলোতে পাখি ফিরবে বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান।
তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করছি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলোতে পাখির সংখ্যা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। প্রতি বছর চার থেকে পাঁচ প্রজাতির হাঁস জাতীয় পাখি দেখা গেলেও এ বছর আমরা মাত্র দুই প্রজাতির পাখি দেখতে পেয়েছি। একই সাথে পাখির সংখ্যাও অনেক কমে গেছে। যথা সময়ে লেক পরিষ্কার না করা, মানুষের কোলাহল, যানবাহনের শব্দ ও যত্রতত্র ভবন নির্মাণের কারণে পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি পাখির নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে পাখিরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে। এতে পুনরায় তারা লেকগুলোতে ফিরবে বলে আশা করি। 
পাখপাখালি দেশের রত্ন, আসুন সবাই করি যত্ন' স্লোগানে পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ২৪তম পাখিমেলা। ২০০১ সাল থেকে জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের (ডব্লিউআরসি) যৌথ উদ্যোগে এ মেলার আয়োজন করে আসছে। 
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তন প্রাঙ্গণে সকাল সাড়ে ১১টায় প্রধান অতিথি হিসেবে বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন,'দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীন সুউচ্চ অবকাঠামো তৈরি করার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ও প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করা হয়েছে। অথচ প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা করার জন্য পাখি মেলার মাধ্যমে আমরা যে চেষ্টা করে যাচ্ছি, তা এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে স্ববিরোধী। আমরা যারা নতুনভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে এসেছি, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো পাখির নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত করা। পাখি রক্ষা করতে পারলে এর অংশ হিসেবে আমরাও সুরক্ষিত হবো। 
মেলার উদ্বোধনের আগে বিগবার্ড বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড, কনজারভেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ও সায়েন্টিফিক পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
মেলায় নতুন প্রজাতির পাখি শনাক্ত করার স্বীকৃতি হিসেবে তিনজন পাখিপ্রেমী লাভ করেন 'বিগবার্ড অ্যাওয়ার্ড'। পুরস্কার বিজয়ীরা হলেন- রাশেদুল করিম রাফাত, শুভঙ্কর বিশ্বাস ও সাইদ হোসাইন।
কনজারভেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন আশিকুর রহমান সমী, শামীম হাসান সীমান্ত ও মো. ইমন ইসলাম। উপাচার্য কামরুল আহসান পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে সনদ ও ক্রেস্ট তুলে দেন।
মেলায় অন্যান্য আয়োজনের মধ্যে ছিল- আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি দেখা প্রতিযোগিতা, পাখিবিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, শিশু-কিশোরদের জন্য পাখির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, স্টল সাজানো প্রতিযোগিতা, অডিও-ভিডিওর মাধ্যমে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি চেনা প্রতিযোগিতা ও অডিও-ভিডিওর মাধ্যমে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি চেনা প্রতিযোগিতা ও পাখিবিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা। এছাড়াও শিশু-কিশোরদের মধ্যে পাখি সংরক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পাপেট শো আয়োজন করে কাকতাড়ুয়া পাপেট থিয়েটার। 
মেলাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই ভীড় জমায় দর্শনার্থীরা। অভিভাবকদের হাত ধরে এসেছে শিশু-কিশোরেরা। তাদের হাতে ও গালে শোভা পাচ্ছে নানা প্রজাতির পাখির প্রতিচ্ছবি। ছোট্ট মেয়ে অনন্যাকে নিয়ে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে মেলায় এসেছেন ইকবাল হাসান। 
তিনি বলেন, পাখিমেলায় এসে বাচ্চারা নানা প্রজাতির পাখির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। এতে পাখির প্রতি মমত্ব এবং সংযোগ বাড়ছে।

Side banner