• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ জানুয়ারি, ২০২৫, ২২ পৌষ ১৪৩১
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.

বাঞ্ছারামপুরে নারী শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার পাল্লা দিয়ে বাড়ছেই!


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | ফয়সল আহমেদ খান জানুয়ারি ৩, ২০২৫, ০৬:৫২ পিএম বাঞ্ছারামপুরে নারী শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার পাল্লা দিয়ে বাড়ছেই!

ফল বের হলে সবাই বলছিল, মেয়েটা আর একটু পড়ালেখা করতে পারলে ভালো হতো। ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে পারত। কিন্তু সালমার বাবা-মায়ের এক কথা। মেয়ে বড় হয়েছে। দেখতেও সুন্দর। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে অনেক বখাটে ছেলে বিরক্ত করত। এখন যদি কোন বিপদ হয়ে যায়! আর প্রতিদিন তাকে কে কলেজে নিয়ে যাবে, আর নিয়ে আসবে? তাই বিয়ে দিলেই শান্তি। সদ্য ১০ম শ্রেণীতে ২য় স্থান অধিকার করে মেধাবী জানায় সে বড় হয়ে শিক্ষক হতে চেয়েছিল। কিন্তু গত শুক্রবার তার বিয়ে হয়ে যায়। শ্বশুর বাড়ির কথা আর পড়তে হবে না। স্বামী ইতালির থাকে। তাকেও কদিন পর নিয়ে যাবে। 
সচেতন মহলের মতে, এমন ঘটনা শুধু সালমার ক্ষেত্রে নয়। ঘটছে আরও অনেক কিশোরী শিক্ষার্থীর জীবনে। নিরাপত্তার অভাব আর দারিদ্র্যের কারণে স্কুলের গণ্ডি পার হতে না হতেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হচ্ছে অনেক কিশোরীকে। আর বাল্য বিয়ের কারণে অকালেই ভেঙ্গে যাচ্ছে এ সব শিক্ষার্থীর স্বপ্ন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের সর্বত্র সম্প্রতি বাল্য বিবাহের কারণে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়ে গেছে শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার হার। যার জন্য প্রধানত দায়ী অসচেতন অভিভাবক ও বাল্য বিবাহের সহায়তাকারী বিয়ের কাজী।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম ফারুক বলেন, ঝড়ে পড়ার হার উপজেলায় ৮-১০ শতাংশ হতে পারে। যা দু'বছর আগে ছিলো ৭ শতাংশের  মতো।
সমাজসেবী ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক উপজেলার ভেলানগরের লাকি ফেরদৌসী বলেন, সমাজে নারীর অবাধ চলাচল নিশ্চিত করতে পারলে এবং নারী ও শিশুর উপর সব ধরনের সহিংসতা রোধ করা গেলে বাল্য বিয়ের হার একেবারেই কমে আসবে।
বাঞ্ছারামপুর সরকারি এস এম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিকুল ইসলাম জানান, বহু শিক্ষার্থী ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীতে ঝড়ে পড়েছে। আর এসব ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর মধ্যে একটা বিশাল অংশই হচ্ছে কিশোরী শিক্ষার্থী। যাদের সংখ্যা মাদ্রাসায় তুলনামূলক বেশী। শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার পেছনে অভিভাবকদের বাল্যবিবাহের প্রতি প্রবণতা নিরাপত্তা একটি বড় কারণ। এছাড়াও অনেকে দারিদ্র্যতার কারণে স্কুল ছেড়ে দিয়ে বাবা-মা’র সাথে কাজ করে।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার অনেকের মতে, বর্তমানে সরকার সবার বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষার বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক। এজন্য সরকার দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পড়ালেখা এবং উপবৃত্তিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এখনো মেয়েরা রাস্তায় নিরাপদ অনুভব করে না। বিশেষ করে গ্রামে এই নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েই বেশী চিন্তিত থাকেন অভিভাবকরা। 
এর কারণ হিসেবে তারা বলেন, সাধারণত এখানে হেঁটেই স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হয় মেয়েদের। কিন্তু সব সময় স্কুলে আসা যাওয়ার সঙ্গী পাওয়া যায় না। যার ফলে তারা নিরাপদ থাকেনা। যার কারণে অভিভাবকরা মেয়েদের বিয়ে দিয়েই নিশ্চিত হতে চান।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ কমিটির সদস্য ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ইভা রহমান বলেন, কিশোরী শিক্ষার্থীদের স্কুল হতে ঝড়ে পড়ার বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগের। তার মতে সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি আমাদের বিশেষ করে ছেলেদের মানসিকতাও পাল্টাতে হবে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করাতে পারলে অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে নিশ্চিত থাকতে পারবে। কাজীদের বাল্যবিবাহ পড়ানো বন্ধ করতে হবে।
বাঞ্ছারামপুর ব্রাক সেন্টার ও শিক্ষা নিয়ে কাজ করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান বিবিএসের তথ্য মতে দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ে এখনো ২৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। এতো সংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়া বিগত সরকারের ব্যর্থতা বলে মনে করেন শিক্ষাবিদদের অনেকেই। এর কারণ পারিবারিক অস্বচ্ছলতা, বাল্যবিয়ে, শিশুশ্রম, পড়াশোনার প্রতি অনীহা-অসচেতনতা। অঞ্চল ভেদে এর কারণেও আছে ভিন্নতা। এছাড়া গত একবছরে একজন শিক্ষার্থীর পেছনে পড়াশোনার খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে সরকারকে এখনই যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের।

Side banner