ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শাহ রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে অসংখ্য কৃতি সন্তান আজ স্বমহিমায় ভাস্বর। এলাকার শিক্ষা বিস্তারে আধ্যাত্মিক সাধক হযরত শাহ রাহাত আলীর নামে ১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। একসময় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মান বেশ সন্তোষজনক ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে নানাবিধ অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা বিশেষ করে প্রধান শিক্ষক আবদুল করিমের সীমাহিন লুটপাটের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি আজ প্রশ্নবিদ্ধ। আর সেই কারণেই এলাকাবাসী বর্তমান প্রধান শিক্ষক আবদুল করিমের অপসারণ দাবি করছে। এলাকাবাসীর পক্ষে মো. ওমর ফারুক নামে জনৈক ব্যক্তি গত ৩১ অক্টোবর কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের বরাবর একটি অভিযোগ দাখিল করেন।
শাহ রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল করিম সরাসরি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। বিগত সময়ে তিনি ছয়ফুল্লাকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মূলত রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারণেই তিনি প্রধান শিক্ষকের পদটি ভাগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন, এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। স্কুলের পাঠদানের চেয়ে রাজনীতিতেই তিনি বেশি মনোযোগী ছিলেন। আর সেই কারণেই শিক্ষার মান ক্রমাগত নিম্নমুখী ছিল।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মধ্যে অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ ছিল শাহ রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়। শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধূলা ও সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কারণে উপজেলার প্রথম সারিতে স্কুলটির অবস্থান ছিল। আবদুল করিম প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরপরই প্রতিষ্ঠানটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। তার (আবদুল করিম) সীমাহিন অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, কর্তব্যে অবহেলা, দায়িত্বহীনতা, পেশাগত অসদাচরণ এবং আর্থিক অনিয়ম সহ নানাবিধ অভিযোগের কারণে অপসারণ এখন সময়ের দাবি।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছয়ফুল্লাকান্দি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এবং ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের নিকট ১০ দফা দাবি উত্থাপন করে। স্কুলের বেশ কয়েকজন শিক্ষকের উপস্থিতিতে ৩ কর্মদিবসের মধ্যে দাবিগুলো পূরণের আল্টিমেটাম দেয়া হয়। সেই সাথে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরও অভিযোগ দেয় ছাত্র নেতারা। পরে ২০ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষে সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. নজরুল ইসলাম স্কুল পরিদর্শনে আসেন। ওইদিন স্কুলেই আসেননি প্রধান শিক্ষক আবদুল করিম। এসময় ছাত্র জনতার দাবির প্রেক্ষিতে সহকারি কমিশনার নজরুল ইসলাম সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
শাহ রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল করিম ধরাকে সরাজ্ঞান করতেন। সম্পূর্ণ অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দখলে থাকা ২৯ শতাংশ জমি বিক্রী করেন। এ বিষয়ে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড, বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তদন্তের মাধ্যমে সত্যতা খুঁজে পান। অথচ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। স্থানীয় লোকজন জানান, আবদুল করিম নগদ ৫ লাখ টাকা পেয়ে মাত্র ৩২ লাখ টাকায় ওই ২৯ শতক জমি বিক্রী করেছেন। অথচ জমির বাজার মূল্য ছিল প্রায় ৫ কোটি টাকা। উন্নয়নের নামে জমি বিক্রীর ৩২ লক্ষ টাকা কোন ব্যাংকে জমা দিয়েছেন তা নিয়েও কানাঘুষা চলছে। যদিও পরে স্কুলের বিক্রীত জমিটি ফেরত নেয়া হয়েছে বলে জানা যায়। তবে কোন প্রক্রিয়ায় এবং কিভাবে জমি ফেরত নেয়া হয়েছিল তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে যায়। আর সেই কারণে অনেকদিন স্কুলে আসেননি। আসলেও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যেতেন। এতে স্কুল পরিচালনা ও শিক্ষার গুণগত মান এবং এসএসসি পরীক্ষার ফল বিপর্যের সম্ভাবনা রয়েছে।
এখানেই শেষ নয়। স্কুলের আয় ব্যয়, পরীক্ষা নিরীক্ষা কিছুই করেননি আবদুল করিম। এককথায় বলতে গেলে একটি বিশেষ চক্রের সাথে আঁতাত করে হরিলুট করেছেন তিনি। আর এক্ষেত্রে স্কুলের বেশ কয়েকজন শিক্ষক এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা তাকে সহযোগিতা করেছেন।
আবদুল করিম শুধুমাত্র স্কুলেরই ক্ষতি করেননি। তিনি তার ব্যক্তিগত জীবনকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। খামখেয়ালিপনা এবং আইনের প্রতি অবজ্ঞার কারণে তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্টও জারি হয়েছিল। পরে বাঞ্ছারামপুর থানায় বন্ড জমা দিয়ে মুক্তি লাভ করেছিলেন। এছাড়াও নানাবিধ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে ওই এলাকার সচেতন মহল আবদুল করিমের পদত্যাগ চায়। একইসাথে তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে অদ্যাবধি স্কুলের আয় ব্যয়ের সঠিক তদন্তের দাবি করছে।
আপনার মতামত লিখুন : :