• ঢাকা
  • শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.
নির্দেশ অমান্য করেছে ৪৪ ব্যাংক

উপেক্ষিত স্বাস্থ্য শিক্ষা, সিএসআরের ৫৪% ব্যয় অন্যান্য খাতে


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ১৬, ২০২৫, ০৫:৪২ পিএম উপেক্ষিত স্বাস্থ্য শিক্ষা, সিএসআরের ৫৪% ব্যয় অন্যান্য খাতে

নিয়ম অনুয়াযী মুনাফার একটি অংশ করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) খাতে খরচ করে দেশের ব্যাংকগুলো। সিএসআরের অর্থ যাতে দেশের টেকসই খাতে ব্যবহার হয় এ জন্য একটি নীতিমালাও রয়েছে। কিন্তু ব্যাংকগুলো এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মানছে না। অর্থ বণ্টনে উপেক্ষিত হচ্ছে অগ্রাধিকার দেওয়া শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত। একই সঙ্গে এ খাতের অর্থ ব্যয় ধারাবাহিকভাবে কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সিএসআর খাতে ২০২৪ সালে ৬১৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয় করেছে ব্যাংকগুলো, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বা ৩০৮ কোটি টাকা কম। ২০২৩ সালে এ খাতে ব্যাংকগুলো ব্যয় করেছিল ৯২৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর আগে ২০২২ সালে ব্যয় করেছিল এক হাজার ১২৯ কোটি টাকা। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ব্যয় কমেছে ৫১৩ কোটি বা ৪৫ শতাংশের বেশি।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের সিএসআর সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এসব তথ্য ওঠে এসেছে। বিদ্যমান নিয়মে যেসব ব্যাংক নিট মুনাফা করবে, শুধু তারা সিএসআর ব্যয় করতে পারে। মুনাফার কত শতাংশ ব্যয় করবে বা আদৌ করবে কি না তা ওই ব্যাংকের নিজস্ব বিষয়। তবে ব্যয় করলে নীতিমালা অনুযায়ী ব্যয় করতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট সিএসআর ব্যয়ের ৩০ শতাংশ শিক্ষা খাতে, স্বাস্থ্য খাতে ৩০ শতাংশ, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রশমন ও অভিযোজন খাতে ২০ শতাংশ ব্যয় করতে হবে। বাকি ২০ শতাংশ অর্থ আয় উপযোগী উদ্যোগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো উন্নয়ন, খেলাধুলা, বিনোদন এবং অন্যান্য খাতের আওতায় খরচ করা যাবে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ৬১টি তফসিলি ব্যাংক আলোচিত সময় (২০২৪ সালে) নির্দেশনা উপেক্ষা করে সবচেয়ে বেশি ৫৪ শতাংশ বা ৩৩০ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয় করেছে ‘অন্যান্য’ খাতে। আর শিক্ষায় মাত্র ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ বা ১০৮ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যে ১৫৫ কোটি বা ২৫ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় মাত্র ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ বা ২২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
২০২৪ সালে ৬টি ব্যাংক সিএসআরে কোনো অর্থ ব্যয় করেনি। ব্যাংকগুলো হলো- বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স, ন্যাশনাল এবং পদ্মা ব্যাংক।
নিয়ম অনুযায়ী ১৪টি ব্যাংক শিক্ষাখাতে ৩০ শতাংশ, ২১টি ব্যাংক স্বাস্থ্যখাতে ৩০ শতাংশ এবং ৯টি ব্যাংক পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রশমন-অভিযোজন খাতে ২০ শতাংশ ব্যয় নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়া ৪৪ ব্যাংক নীতিমালা অমান্য করে অন্যান্য খাতে ২০ শতাংশের বেশি ব্যয় করেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে ৮টি ব্যাংকের নিট মুনাফা অর্জিত হয়নি। ব্যাংকগুলো হলো- বেসিক, বাংলাদেশ কৃষি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক, সিটিজেনস্, ন্যাশনাল এবং পদ্মা ব্যাংক। তবে তাদের মধ্যে নিট মুনাফা অর্জন না করেও সিটিজেনস্ ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক সিএসআর ব্যয় করেছে।
২০১৩ সালের পর লাইসেন্স পাওয়া ১৩টি ব্যাংকে আগের বছরের নিট মুনাফার অন্তত ১০ শতাংশ পরবর্তী বছরে সিএসআর খাতে ব্যয়ের শর্ত রয়েছে। কোনো ব্যাংকের নিট মুনাফা না হলে সিএসআরে ব্যয় করতে হবে না। এসব ব্যাংকের মধ্যে গত বছর এনআরবি ও কমিউনিটি ব্যাংক ১০ শতাংশে বেশি ব্যয় করেছে। আর বিভিন্ন অনিয়মের কারণে দুর্বল হওয়া পদ্মা এবং নতুন সিটিজেন ব্যাংক ২০২৩ সালে নিট মুনাফা অর্জিত হয়নি বলে সিএসআর করেনি।
এ ছাড়া ৯টি ব্যাংক নিট মুনাফা করলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শর্ত পরিপালন করেনি। ব্যাংকগুলো হলো- এসবিএসি, মিডল্যান্ড, মধুমতি ব্যাংক, সীমান্ত, এনআরবি কমার্শিয়াল, ইউনিয়ন, মেঘনা, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক।

Side banner