গাইবান্ধায় জমির প্রকৃত মালিকের অনুপস্থিতিতে ২০২৪ সালের স্ট্যাম্পে ২০২০ সালের তৈরি করা হয়েছে হেবা ঘোষণার দলিল। উদ্দেশ্য ছিল ১ একর ৮১ শতাংশ জমি হাতিয়ে নেয়া। জালিয়াতির প্রায় সব ধাপ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করে জমির দাবীর সময় বিষয়টি ধরা পড়ে প্রকৃত মালিকদের কাছে। পর পর ৩ বার আবেদনের পরও মিলছেনা দলিলের জাবেদা (নকল)। প্রতিকারের দাবীতে জেলা প্রশাসক এর দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী একরামুল হক।
একরামুল হক সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান শেখের পুত্র।
ঘটনার আদ্যোপান্ত ও অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, একরামুল হকের পিতা আব্দুর রহমান শেখ এর নামে রঘুনাথপুর মৌজার জেএল নং-২৩, সিএস খতিয়ান-১২৭, বিআরএস খতিয়ান-৭১, ৭৩ এর ২ একর ৬০ শতাংশ জমি চূড়ান্তভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে। এমতাবস্থায় গত ২১/০৪/২০২৪ ইং তারিখে আব্দুর রহমান শেখ মৃত্যু বরণ করেন। এ সুযোগে একই গ্রামের প্রতিপক্ষ আব্দুর রহমানের পুত্র আমিনুল ইসলামগং জমির দাবী করে একটি হেবা ঘোষণার দলিল (নং ৯৪৫১, তারিখ ৩০/১২/২০২০ইং) উপস্থাপন করেন।
ভুক্তভোগী একরামুল হক উক্ত দলিলের সত্যতা যাচাই করতে গাইবান্ধা সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জাবেদা উত্তোলনের জন্য গত ০৩/০৭/২০২৪, ০৯/০৮/২০২৪ এবং ০৯/০৯/২০২৪ ইং তারিখে আবেদন করেও কোন প্রকার জাবেদা (নকল) সরবরাহ করতে না পেরে হয়রানির শিকার হয়ে আসছেন।
এতে নিরুপায় হয়ে একরামুল হক গত ২৯-০৯-২০২৪ এবং ০৬-১০-২০২৪ ইং তারিখে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক এর দপ্তরে পৃথক পৃথকভাবে ২টি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে দলিলের জাবেদা (নকল) প্রাপ্তিতে সহায়তাসহ দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান।
একরামুল হক অভিযোগে দাবী করেন, দলিলে ব্যবহৃত ১০ টাকা মূল্যমানের ঢ সিরিজের ৫২৪৬৩৪০ ও ৫২৪৬৩৪১ নম্বর নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ট্রেজারি হতে ১৭-০৪-২০২৪ইং তারিখে সরবরাহ করা। ১০ টাকা মূল্যমানের ড সিরিজের ৭৫৬৩৩২০, ৭৫৬৩৩২২, ৭৫৬৩৩২৩ নম্বর নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ট্রেজারি হতে ২৪-০৮-২০২৩ইং তারিখে সরবরাহ করা। যার বালাম নং ৮৩ (অ), পাতা নং ১১৪-১২২। প্রতিপক্ষ আমিনুল ইসলাম গাইবান্ধা সদর সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের অফিস সহকারী আনিছুর রহমান, অফিস সহায়ক মাসুদ রানা মুকুল ও নকল নবীশ আব্দুল কদ্দুছ এর সহাযোগীতা ও যোগসাজশে হেবা ঘোষনার দলিলটি সৃজন করেছেন।
একরামুল হক আরও দাবী করেন, প্রকৃত পক্ষে তার পিতা মৃত আব্দুর রহমান শেখ ওই দলিলটি কখনোই করে দেননি। দলিলটি বালাম বহি ব্যতিত, টিপ বহি, বি টি ফি বহি, রেজিস্ট্রেশন ফি বহি ও সূচি বহিতে যার কোন অস্তিত্ব নেই।
বিষয়টি জানতে সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের অফিস সহকারী আনিছুর রহমান, অফিস সহায়ক মাসুদ রানা মুকুলের সাথে কথা হলে জানা যায়, ওই দলিল বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানেন না। সে সময়ে আনিছুর রহমান নামে অন্য একজন অফিস সহকারী ছিলেন। বর্তমানে তিনি নেই। ২০২০ সালের পর তাঁরা এ অফিসে যোগদান করেন।
নকল নবীশ আব্দুল কদ্দুছ জানান, আমার দ্বারা ওই দলিলের বালামভুক্তির কাজ হয়নি। কে বা কারা করেছে আমি জানি না।
ঘটনার বিস্তারিত জানতে গাইবান্ধা সদর সাব-রেজিষ্ট্রার মেহেদী হাসান এর সাথে স্বাক্ষাত করা হলে জানান, বিষয়টি তদন্তনাধীন রয়েছে। ২/৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করব।
আপনার মতামত লিখুন : :