• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.
যুবদল-শ্রমিকদল-মৎস্যজীবী দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ

পর্যটককে মারধর করে টাকা হাতিয়ে নিলেন নেতারা


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | স্টাফ রিপোর্টার এপ্রিল ২৯, ২০২৫, ০৩:১৪ পিএম পর্যটককে মারধর করে টাকা হাতিয়ে নিলেন নেতারা

কুয়াকাটায় বাদল মোল্লা নামে এক পর্যটককে মারধর করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় যুবদল, শ্রমিকদল ও মৎস্যজীবী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে। রবিবার রাতে কুয়াকাটার আবাসিক হোটেল ‘আপন ভুবনে’ এ ঘটনা ঘটে। তবে ইতোমধ্যে ওই পর্যটককে চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন অভিযুক্ত নেতারা।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন ঘটনা শুনেছি। ভুক্তভোগী অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভুক্তভোগী বাদল মোল্লা জানান, তিনি পরিবারের সঙ্গে অভিমান করে গত ১৭ এপ্রিল থেকে কুয়াকাটার আবাসিক হোটেল আপন ভুবনে ওঠেন। মন খারাপ থাকায় ১০০ টাকা দিয়ে এক ভ্যান চালককে গাঁজা আনতে পাঠান। কিছুক্ষণ পর ভ্যানচালক ফিরে এসে পেপার কাগজে টিস্যু মুড়িয়ে পর্যটক বাদল মোল্লার হাতে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্ত নেতাদের সহযোগী আল-আমিন, মোস্তাফিজ, বেল্লালসহ অজ্ঞাত আরও দুজন তাকে মারধর শুরু করেন।
পরবর্তীতে পৌর শ্রমিকদলের সিনিয়র সহসভাপতি জসিম মৃধা, মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি আবুবক্কর পর্যটক বাদল মোল্লাকে হোটেলের রিসিপশনে নিয়ে আবারও মারধর করেন।
একপর্যায়ে তারা পর্যটক বাদল মোল্লার রুমে গিয়ে ৪ পিস ইয়াবা ও ২২ হাজার টাকা পায়। পর্যটক বাদল মোল্লা ২২ হাজার টাকা হোটেল ম্যানেজার মিজানের কাছে দেন। এ সময় বাদল মোল্লার ২টি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যান। হোটেল ম্যানেজার মিজানকে হুমকি দিয়ে মৎস্যজীবী দল নেতা আবু সালেহ টাকা নিয়ে ওয়ার্ড যুবদল নেতা আবু বক্করকে দেন। পরবর্তীতে পর্যটক বাদল মোল্লার মোবাইল ২টি ফিরিয়ে দিয়ে তারা হোটেল ত্যাগ করেন। এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।  
হোটেল ম্যানেজার মিজান বলেন, গভীররাতে আমার হোটেলের সামনের রাস্তায় ডাকচিৎকার শুনে গিয়ে দেখি গেস্ট বাদল মোল্লাকে অভিযুক্তরা মারধর করছেন। আমি তাদেরকে হোটেলের রিসিপশনে আসার অনুরোধ করি। কিন্তু রিসিপশনে এসে তারা আমার গেস্টকে মারধর করেন এবং তার কক্ষে প্রবেশ করে ২৩ হাজার ৯শ টাকা ও দুটি মোবাইল নিয়ে যান। পরবর্তীতে মোবাইল দুটি ফেরত দিলেও টাকা নিয়ে চলে যান। 
ভুক্তভোগী পর্যটক বাদল মোল্লা বলেন, আমার ব্যাগে ২২ হাজার টাকা এবং প্যান্টের পকেটে ছিল এক হাজার ৯শ’ টাকা। ব্যাগের ২২ হাজার টাকা আমি হোটেল ম্যানেজারের কাছে দিয়েছি। তার কাছে তারা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। আমি রবিবার থেকে না খেয়ে আছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কুয়াকাটা পৌর মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না দাবি করে বলেন, হোটেল ম্যানেজার আমার কাছে ২২ হাজার টাকা দিয়েছেন। আমি টাকাটা ওয়ার্ড যুবদলের নেতা আবুবকরের কাছে দিয়েছি। পরে কি হয়েছে আমি জানি না।
ওয়ার্ড যুবদল নেতা আবুবকর বলেন, আমি আবুসালেহর কাছ থেকে ২২ হাজার টাকা নিয়েছি। পরবর্তীতে পর্যটক বাদল মোল্লাকে ফেরত দিয়ে চলে গেছি।
এদিকে হোটেল কক্ষে বসে শ্রমিকদলের সিনিয়র সহসভাপতি জসিম মৃধাকে পুলিশ পরিচয় দিয়েছেন সহযোগীরা এমনটাই দারি করেছেন ভুক্তভোগী পর্যটক বাদল মৃধা। তবে জসিম মৃধা বলেছেন তার সামনে কেউ পুলিশ পরিচয় দেয়নি। পর্যটককে মারধরের কথা স্বীকার করে শ্রমিক দলের এই নেতা বলেন, বিষয়টি ইতোমধ্যেই ফয়সালা হয়েছে। পর্যটককে চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।  
এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌর শ্রমিকদলের সভাপতি মানিক ফকির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি সোমবার বিকেলে ফয়সালা হয়েছে। ওই পর্যটককে কিছু টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। তবে কত টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে, তা তিনি বলতে নারাজ।
এ প্রসঙ্গে কুয়াকাটা পৌর যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মো. ফারুক বলেন, যুবদলের কোনো নেতা এ ঘটনায় জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনো আবাসিক হোটেলে অপরাধ সংঘটিত হলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবেন। সেখানে দলের কোনো নেতাকর্মীর যাওয়ার সুযোগ নেই।
কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান হাওলাদার বলেন, আমার নেতা তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো দুষ্কৃতিকারীর স্থান বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনে হবে না। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সভাপতি আ. আজিজ মুসুল্লি বলেন, অপরাধীদের বিএনপিতে কোনো স্থান নেই। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Side banner