• ঢাকা
  • সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.

প্রশাসনকে ম্যানেজ করেছে দুর্নীতিবাজ ইউপি সচিব আশিক! 


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | স্টাফ রিপোর্টার এপ্রিল ২৮, ২০২৫, ১২:০২ পিএম প্রশাসনকে ম্যানেজ করেছে দুর্নীতিবাজ ইউপি সচিব আশিক! 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছলিমাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. আশিকুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। আর সেই কারণেই বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছলিমাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাকে বিজয়নগর উপজেলার সিংগারবিল ইউনিয়ন পরিষদে বদলি করা হয়। 
গত ১৬ এপ্রিল ৪৬.৪২.১২০০.০১১.১৯.০০১.১৮.২১৬ নং স্মারকে বদলির আদেশ দেন স্থানীয় সরকার বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার উপ পরিচালক (উপসচিব) শঙ্কর কুমার বিশ্বাস। গত ২১ এপ্রিল সিংগার বিলে যোগদানের শেষ তারিখ হলেও তিনি বদলির আদেশ উপেক্ষা করেন। সেখানে যোগদান না করে ছলিমাবাদ ইউনিয়ন পরিষদেই দাপ্তরিক কাজ করেন। 
২৩ এপ্রিল বর্তমান কর্মস্থলে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত হলেও তিনি জোরপূর্বক ছলিমাবাদ ইউনিয়নেই কাজ করছেন। তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়নি। বরং তিনি সদম্ভে একাধিকবার বলেছেন, এই বদলি ঠেকানো হবে। তাছাড়া প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের ম্যানেজ করা হয়েছে। ফলে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
আশিকুর রহমান ২০২২ সালের ৯ মে ছলিমাবাদ ইউনিয়ন পরিষদে যোগদান করেন। এখানে যোগদানের পর থেকেই তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠে। জন্ম নিবন্ধন, মৃত্যু সনদ ও জন্ম সনদ সংশোধনে অতিরিক্ত ফি আদায়ের মাধ্যমে পুরো ইউনিয়নবাসীকে জিম্মি করে রেখেছেন। বিশেষ করে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ধরাকে সরাজ্ঞান করেছেন ইউপি সচিব আশিকুর রহমান। বলতে গেলে তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই ছলিমাবাদ ইউনিয়ন পরিষদকে স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন। তাছাড়া দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকার কারণে দালালদের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। 
স্থানীয়রা জানান, প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে দুর্নীতি করে মাসে লাখ টাকা অবৈধ ভাবে হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক দেশে জন্ম বা মৃত্যুর ৪৫ দিন পর্যন্ত বিনা ফি-তে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন করার সুযোগ রয়েছে। শিশুদের ক্ষেত্রে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত পঁচিশ টাকা ও পাঁচ বছরের উর্ধ্বে সকল বয়সী নাগরিকের ক্ষেত্রে পঞ্চাশ টাকা এবং জন্ম তারিখ সংশোধনের ক্ষেত্রে একশ’ টাকা ফি নির্ধারিত থাকলেও সেই নিয়মের তোয়াক্কা না করে প্রত্যেকটিতে দ্বিগুণ হারে বাড়তি টাকা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন একাধিক সেবাগ্রহীতা। তাছাড়া সেবা প্রত্যাশীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা তার স্বভাবে পরিণত হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হায়দরনগর গ্রামের জনৈক ব্যক্তি বলেন, আমার বোনের জন্ম নিবন্ধন করতে এসেছি। একটা জন্ম নিবন্ধন বাবদ সচিব আশিককে ১ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। একই ভাবে অন্যান্য খাত থেকেও অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয়েছে। 
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাতুয়াকান্দি গ্রামের আরেক ব্যক্তি বলেন, যতটুকু জানি সংশোধন করতে ৫০ টাকা, আর বয়স সংশোধন ১০০ টাকা কিন্তুু তারপরেও আমার কাছে থেকে ৫০০ টাকা অতিরিক্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা নিরুপায়। দেখার বা বলার কেউ নেই।
সরকার নির্ধারিত ফি’র বাইরে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার বিষয়ে উপস্থিত অনেকেই বলেন, ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে পতিত আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান চলে যাওয়ার পর সচিব আশিকুর রহমান বেপরোয়া হয়ে পড়েন। তার দুর্নীতি আরও বেড়ে যায়। ইউপি সদস্যদের অবমূল্যায়ন করাও তার স্বভাবে পরিণত হয়েছে।
ছলিমাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আশিকুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তিনি ওই ইউনিয়নের জন্য বরাদ্দকৃত হারভেস্ট মেশিন বিজয়নগরে বিক্রী করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বাঞ্ছারামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাসিরউদ্দিন তাকে সহযোগিতা করেছেন, এমনটাই জানিয়েছে ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ।
এদিকে সিংগারবিল থেকে ছলিমাবাদে বদলিকৃত ইউপি সচিব জাকারিয়া জানান, তাকে ছলিমাবাদে কাজ করতে কিছুটা বাঁধা দিচ্ছেন আশিকুর রহমান। আর সেই কারণেই তিনি সিংগারবিলে অবস্থান করছেন। তবে সেখানে দাপ্তরিক কোন কাজ করছেন না। 
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বলেন, যেহেতু তার বদলির আদেশ হয়েছে, সেহেতু ছলিমাবাদে তার থাকার কোন সুযোগ নেই।
হারভেস্ট মেশিন প্রসঙ্গে ইউএনও বলেন, এই ব্যাপারে কৃষি কর্মকর্তাই বলতে পারবেন। তবে আমি খোঁজ নেব। 
ছলিমাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আশিকুর রহমান বলেন, আমার বিরুদ্ধে লিখে কোন কাজ হবে না। প্রশাসনে আমার লোক আছে। বদলি কিভাবে ঠেকাতে হয় তা আমি জানি। আর হারভেস্ট মেশিন প্রসঙ্গে কৃষি কর্মকর্তা জানেন। আমি কিছুই জানিনা। আমি একজন সৎ মানুষ। জীবনে ২ টাকাও বাড়তি নেইনি। 

Side banner