ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) মো. কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য, দুর্ব্যবহার ও নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি দায়িত্ব পালনকালে তিনি সেবা প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করেন, অফিসে প্রকাশ্যে ধূমপান করেন এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে অসদাচরণ করে থাকেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নামজারি বা খারিজের জন্য ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দাবি করেন নায়েব কামাল। একটি পর্চা তোলার জন্যও দিতে হয় ২০০ থেকে ৫০০ টাকা। টাকা ছাড়া তাঁর কাছ থেকে কোন সরকারি সেবা পাওয়া সম্ভব নয় বলেই অভিযোগ করেছেন বহু সেবা প্রার্থী। অফিসটিকে তিনি যেন ঘুষ বাণিজ্যের আখড়ায় পরিণত করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ভুক্তভোগী আমির হোসেন জানান, “আমি নামজারি করতে গেলে কামাল হোসেন ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে স্থানীয় এক মোক্তারের মাধ্যমে ১২ হাজার টাকা দিয়ে কাজটি করিয়েছি।” এমন অভিযোগ শুধু একজনের নয়, একাধিক ভুক্তভোগী একই অভিযোগ করেছেন।
মো. কামাল হোসেন নিজেই সোনারামপুর ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে প্রভাব খাটিয়ে নিজ ইউনিয়নেই চাকরি করছেন। জানা গেছে, এর আগেও তাঁকে ঘুষ বাণিজ্যের কারণে একাধিকবার শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে, কিন্তু আবারও নিজের প্রভাব খাটিয়ে ফিরে এসেছেন।
তাঁর আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে স্থানীয়দের মধ্যে। অভিযোগ রয়েছে, চর মরিচাকান্দিতে কোটি টাকার উপরে ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেছেন তিনি, যা একজন নায়েবের বেতনে সম্ভব নয়। এছাড়া নরসিংদীতে জমি এবং সন্তানদের ব্যয়বহুল প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার খরচ ঘুষ থেকেই মেটানো হচ্ছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
এছাড়া সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে দোকান বরাদ্দ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া, সোনারামপুর বাজারে দখলদারদের সঙ্গে আঁতাত করে দশ লাখ টাকার বেশি আদায় এবং মরিচাকান্দি চরে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের কাছ থেকে দৈনিক ঘুষ গ্রহণের অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো, তিনি প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের তথ্য আগেই পাচার করেন, যার ফলে অভিযান ব্যর্থ হয় এবং প্রকৃত অপরাধীরা রেহাই পায়।
স্থানীয়রা জানান, “নায়েব সাহেব বলেন, আমি প্রশাসনের লোক, আমার কিছু হবে না। আমি টাকা দিয়ে এখানে বদলি হয়ে এসেছি। উপরের সবাই ভাগ পায়।” এসব কথা শুনে হতবাক সাধারণ মানুষ।
আপনার মতামত লিখুন : :