দেশে আবাসিক ভবনে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে কয়েক বছর ধরে। গত পাঁচ বছরে দেশে এলপিজি সিলিন্ডারের ব্যবহার বেড়েছে পাঁচগুণ। চাহিদা বাড়ায় বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতাও বেড়েছে। ফলে যেখানে সেখানে অবৈধভাবে মজুদ করে এই ঝুঁকিপূর্ণ সিলিন্ডার বেচাকেনা বেড়েছে। বেশিরভাগ দোকানি বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়াই এই ব্যবসা করছে। এলপিজি সিলিন্ডার এখন পাড়া মহল্লার মুদি দোকানেও পাওয়া যাচ্ছে। এসব দোকানির অনেকেরই ট্রেড লাইসেন্স নেই। গ্যাস সিলিন্ডার বেচাকেনারও অনুমোদন নেই। এসব দোকানে নেই আগুন নির্বাপক যন্ত্র। বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটলে প্রতিকারেরও কোন ব্যবস্থা নেই। তারপরও এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। ফলে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ৯৫ শতাংশ দোকানে লাইসেন্স ছাড়া বিক্রি হচ্ছে। অনেকে আইন ভঙ্গ করে ২০০ থেকে ৩০০ সিলিন্ডার মজুদ রেখে বিক্রি করছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই পণ্য সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না। বড় কোম্পানিগুলো লাইসেন্স নিয়েই এলপিজি সিলিন্ডার বাজারে ছাড়ছে। কিন্তু বিক্রির ক্ষেত্রে ডিলারদের লাইসেন্স আছে কি না বিষয়টি দেখছে না কোম্পানিগুলো। বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পাড়া মহল্লা, অলি গলির ছোট ছোট দোকান, খুচরা বাজারের দোকানে যত্রতত্র ফেলে রেখে বিক্রি করছে এলপিজি সিলিন্ডার। এসব দোকানদার বেশিরভাগই বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স নেননি। তাছাড়া তদারকির অভাবে ঝুঁকি জেনেও দোকানিরা সনদ ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়াই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। বেশিরভাগ দোকানি ব্যবসা পরিচালনার সাধারণ ট্রেড লাইসেন্স নিলেও ১০টির বেশি সিলিন্ডার মজুদ রেখে বিক্রির ক্ষেত্রে বিস্ফোরক সনদ নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু এসব দোকানে ২০টি থেকে শতাধিক সিলিন্ডার মজুদ রেখে বিক্রি করলেও সনদ নেই।
তাছাড়া এক দোকানে নানা ব্র্যান্ডের এলপি গ্যাস বোঝাই সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও চা ও পানের দোকান ছাড়াও হার্ডওয়্যার, সিমেন্ট, মনোহরি ও মুদি সামগ্রী বিক্রির দোকানেও এলপি গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে।
বর্তমানে বাঞ্ছারামপুরে সবচেয়ে বেশি বিক্রী হচ্ছে বসুন্ধরা এলপি গ্যাস। তারপরই এলপি গ্যাস লিমিটেড, ওমেরা, বেক্সিমকো, টোটাল গ্যাস, জি গ্যাস, ওরিয়ন, নাভান, পেট্রোম্যাক্স, ফ্রেশ গ্যাস, যমুনা, লাফাজ সহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গ্যাস অবাধে বিক্রী হচ্ছে। এসব দোকানগুলোতে সরকারি কোন তদারকি নেই। আর সেই কারণেই বিক্রেতারা ধরাকে সরাজ্ঞান করছেন।
বিস্ফোরক আইন ১৮৮৪-এর অধীনে গ্যাস সিলিন্ডার বিধিমালা-২০০৪-এর ৬৯ ধারা অনুযায়ী, লাইসেন্স ছাড়া অনধিক ১০টি গ্যাসপূর্ণ সিলিন্ডার মজুদ করা যাবে। তবে বিধির ৭০ ধারা অনুযায়ী, এসব সিলিন্ডার মজুদ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জাম মজুদ রাখতে হবে। এলপিজি স্থাপনা প্রাঙ্গণে ধূমপান, দিয়াশলাই বা আগুন লাগতে পারে এমন কোনও বস্তু বা সরঞ্জাম রাখা যাবে না। মজুদ করা স্থানের কাছে আলো বা তাপের উৎস থাকা চলবে না। কিন্তু এসব আইনের তোয়াক্কা না করে চায়ের দোকানে চুলার পাশে মজুদ রেখে কিংবা সিগারেটের দোকানে বিক্রি হচ্ছে এলপিজি সিলিন্ডার।
বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক বলেন, খুচরা দোকানে ১০টি সিলিন্ডার বিক্রি করতে পারবে। আর এর বেশি বিক্রি করতে হলে প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স নিতে হবে। সনদ ছাড়া ব্যবসা সম্পূর্ণ বেআইনি। বর্তমানে এলপিজি গ্যাস বিক্রির ক্ষেত্রে সারাদেশে ৬ হাজার সনদ আছে।
তিনি বলেন, সনদ না নিয়ে বিক্রি করলে বিষয়টি আইন অনুযায়ী স্থানীয় প্রশাসন দেখার কথা। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহ কর্মকর্তারা এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। বিস্ফোরক পরিদপ্তরের জনবল কম থাকায় এবং প্রশাসনিক ক্ষমতা না থাকায় ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
তিনি আরও বলেন, পণ্য বিক্রি বাড়াতে কোম্পানিগুলোর অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে যত্রতত্র ঝুঁকিপূর্ণ এই গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। যদিও তাদের লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এলপিজির মতো দাহ্য পদার্থ মজুদের জন্য বিশেষ গুদামঘর থাকতে হবে। তা না হলে সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বের হয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন : :