ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় তিতাস নদীতে নদীপথ বন্ধ করে জালের বেড়া দিয়ে অবৈধভাবে প্রতি বছরই মাছ শিকার করছেন দেড় শতাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি। প্রতি বছরই ডিসেম্বর মাস শুরু হলেই প্রকাশ্য এই শিকারের মহোৎসব শুরু হয়। গত এক মাসে তিতাস ও তিতাস মোহনার ঢোলভাঙ্গা নদীর প্রায় দুইশ’ স্থানে এ ঘের বা বেড়া দেওয়া হয়।
এর ফলে নদী পথে লঞ্চ-ইঞ্জিন চালিত নৌকা চলাচলের উপর মারাত্বক ব্যাঘাত ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মাঝে মধ্যে সেজন্য ঘটছে দূর্ঘটনা। এ ছাড়া মাছ হয়ে যাচ্ছে ব্যক্তিকেন্দ্রিক। যার ক্ষমতা আছে তিনিই জাল দিয়ে মাছের এই ভরা মৌসুমে ঘের দিয়ে মাছ আটকাচ্ছেন। ফলে, সাধারণ জেলেরা ফিরছেন খালি হাতে।
এ ছাড়া বছরের পর বছর ধরে নদীর বিভিন্ন স্থানে জালের বেড়া দিয়ে এক শ্রেণির লোকজন মাছ শিকার করলেও এসব ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, তিতাস মোহনার বাঞ্ছারামপুর উপজেলাস্থ ঢোলভাঙ্গা নদীটি উপজেলার আসাদনগর, নিলখী, সাহেবনগর, ছলিমাবাদ, দুর্গারামপুর, বাঞ্ছারামপুর, জয়কালীপুর, জয়নগর, আকানগর, হাসন্নগর, মধ্যনগর, কালাইনগর, ঈমামনগর, ফরদাবাদ, পূর্বহাটি, চরলহনিয়া, ভুরভুরিয়া, পাইকারচর, উজানচর, বুধাইরকান্দি, রাধানগর, কালিকাপুরসহ অর্ধশত গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনা নদীতে গিয়ে পতিত হয়েছে। প্রায় ৪০ কিলোমিটার নদীর প্রায় দেড়শতাধিক স্থানে ভৈরবজালের বেড়া দিয়ে পোনাসহ ছোট-বড় সব মাছ শিকার করছেন এলাকার প্রভাবশালীরা। এতে নৌপথের বিঘ্ন ঘটিয়ে অবাধে পোনাসহ বড় মাছ শিকার করছেন তারা।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছরের ডিসেম্বর জানুয়ারি পর্যন্ত ২ মাস বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সময় নদীর বিভিন্ন স্থানে জালের বেড়া দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। নদীতে আড়াআড়িভাবে ২৫০-৩০০ ফুটের লম্বা জালের বেড়া দেওয়া হয়। এই জালের এক প্রান্তে ১৫-২০ ফুট দূরে দূরে বাঁশের মাচা গেড়ে লম্বা বাঁশ দিয়ে নদীর একেবারে নীচে জাল গুজে দেয়া হয়। প্রতিটি জালে ২০-২৫ শ্রমিক মাছ ধরার কাজ করেন। সাহেবনগর-আছাদনগর তিতাস নদীর মোড়ে সাহেবনগর গ্রামের পাশে মাতু মিয়ার এবং আছাদনগর গ্রামের পাশে জলিল মিয়ার জাল দুটি আড়াআড়িভাবে রয়েছে। এই মোড় এলাকা দিয়ে নৌকা চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। না থামিয়ে নৌকা চলাচল করতে পারে না।
প্রকৃত ও সাধারণ জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, মৎস্য আফা কেডায়, হেইডাই আমরা জানি না। তিনি তো আহেন না। নিলখী ও পাঠামারার মাছ টেহাওয়ালারা নেয় গা, হেইডা কি মেডাম দেহেন না?
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাইদা ইসলামকে দুদিন অফিসে যেয়ে না পেলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, আমাকে নবীনগরসহ বাঞ্ছারামপুর দুই উপজেলার দায়িত্ব পালন করতে হয়। দেখার সময় করে উঠতে পারিনা। তবে, নদীতে জালের বেড়া দিয়ে মাছ শিকার করা অবৈধ। এই বিষয়টি আমি জেনেছি। শ্রীঘ্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল মনসুর বলেন, নদীতে জালের বেড়া দিয়ে চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না কোনোভাবেই। নদীতে নৌকা চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা অপরাধ। বিষয়টি মৎস্য কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিব।
আপনার মতামত লিখুন : :