• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ জানুয়ারি, ২০২৫, ২০ পৌষ ১৪৩১
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.

ফুলবাড়ীতে কমছে আলুর দাম দুশ্চিন্তায় কৃষক


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | প্লাবন শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি ডিসেম্বর ৩১, ২০২৪, ০২:৪৮ পিএম ফুলবাড়ীতে কমছে আলুর দাম দুশ্চিন্তায় কৃষক

বাজারে মিলেছে চাহিদার চেয়ে বেশি মূল্য। তাই এবছর আলু চাষে বেশি আগ্রহ দেখা দিয়েছিল কৃষকদের মাঝে। যেমন আলুর আবাদও হয়েছে অধিক। ঠিক তেমনি নতুন আলু উঠার সাথে সাথে স্বাভাবিক দামের তুলনায় চড়া দামও পেয়েছে চাষীরা। কিন্তু হঠাৎ আলুর দাম কমে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার কৃষকরা।
তবে আলুর এ অস্বাভাবিক দামে স্বস্তি না থাকলেও দাম কমে আসার খবরে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে। বাধ্য হয়েই বেশিদামে আলু কিনে খেতে হচ্ছিল বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
কৃষক সূত্রে জানা যায়, মৌসুমের শুরুতে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি আলু বিক্রি করেছেন কৃষকরা। পরে তা কমে বর্তমানে দাম দাঁড়িয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। লাল আলু (হল্যান্ড ও ক্যারেজ জাত) ও সাদা জাতের দাম আরও কমে গেছে। আলুর মৌসুম পুরোপুরি শুরু হওয়ার আগেই আলুর দাম এভাবে কমে যাওয়ায় হতাশা ভর করেছে কৃষকদের। বিদেশ থেকে আলু আমদানির কারণে এমনটা হচ্ছে বলে অভিযোগ কৃষকদের।
উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের বারাইপাড়া গ্রামের আলু চাষী মজিবর রহমান বলেন, আগাম আলুর ফলন তুলনামূলক কম হয়। তবে এ বছর আলুর বীজের দাম বেশি ছিল। দেশের বাহির থেকে আলু আসার কারণে আলুর দামও দিন দিন কমছে। এতে কৃষকদের তেমন লাভ হচ্ছে না।
আলাদীপুর ইউনিয়নের তালতলা গ্রামের আলু চাষী লক্ষণ চন্দ্র রায় বলেন, আগাম আলুতে উৎপাদন খরচ অনুযাযী দাম পাচ্ছেন না।
ফুলবাড়ী পৌর কাঁচাবাজারে আলু কিনতে আসা শহিদুল ইসলাম বলে, ক'দিন আগে আলু ১০০ টাকা কেজি দরে কিনে খেতে হয়েছে। আলু যেহেতু নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজি তাই সব তরকারিতেই আলুর ব্যবহার হয়। বাধ্য হয়ে বেশি দামেই আলু কিনে খেতে হয়েছে। বর্তমানে আলুর দাম কিছুটা কমে আসায় স্বস্তি অনুভব হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ফুলবাড়ী উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ১৮ হাজার ৯২৯ হেক্টর চাষযোগ্য আবাদি জমি রয়েছে। এরমধ্যে চলতি মৌসুমে আলু চাষ হয়েছে এক হাজার ৮২৩ হেক্টর  জমিতে। এতে ফলন ধরা হয়েছে প্রতি হেক্টরে ২৫ মেট্রিকটন এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫৭৫ মেট্রিকটন। এরমধ্যে আগামী আলু চাষ করা হয়েছে ৭৫০ হেক্টর জমিতে। আগাম আলু উৎপদনের ফলন ধরা হয়েছিল হেক্টরে ১৭ থেকে ১৮ মেট্রিক টন। তাছাড়া চলতি মৌসুমে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, গাঁজরসহ অন্য শীতকালীন সবি চাষ হয়েছে এক হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে।
কৃষকরা জানান, আগাম জাতের আলু ও ফুলকপি বাঁধাকপিসহ অন্যান্য সবজি জাতির আবাদ করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন অনেক কৃষক। কম খরচে ভাল দাম পেয়ে খুশি আলু ও ফুলকপি চাষীরা। ফুলকপির পাশাপাশি আগাম জাতের আলু, বাঁধাকপি, বেগুন, মুলা, লাল শাক, পালন শাক, ধনেপাতা, টমেটো, গাঁজর, স্কোয়াস, শালগম ও পটোল চাষাবাদ করছেন। প্রতি বছর এ উপজেলায় ব্যাপকভাবে আগাম সবজি চাষাবাদ করা হয়। এরমধ্যে আলুর দাম কমে যাওয়ায় অনেক কৃষকের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার শিবনগর ও পৌর এলাকার কয়েকটি এলাকা দেখা গেছে, ভোর থেকে কিষাণ-কিষাণী দল বেঁধে জমি থেকে আলু, ফুলকপি ও বাঁধাকপি  সংগ্রহ করে তা ওজনের পর বিক্রির জন্য ফুলবাড়ী সবজি বাজারে পাঠাচ্ছেন।
এতে দেখা গেছে, গ্রামগুলোতে আলু, ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রির ধুম পড়ে গেছে। বিভিন্ন  জেলা ও উপজেলা থেকে পাইকারেরা আসেন কাক ডাকা ভোরে; সঙ্গে আলু ও সবজি পরিবহনের জন্য নিয়ে আসেন, ট্রাক, মিনি ট্রাক, পিকআপ ভ্যানসহ অটোরিকশা।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার জানান, গত বছর আলুর দাম ভালো পাওয়ায় চলতি বছর কৃষকেরা আলু ও সবজি জাতীয় আবাদের দিকে ঝুঁকেছেন। গত বছরের চেয়ে চলতি বছর উপজেলায় আলুর আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আশা করা যাচ্ছে ফলন ভালো হবে। মাঠপর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।

Side banner