• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.

ধামইরহাটকে মডেল উপজেলা করা হলো না: ইউএনও মোস্তাফিজুর


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | ছাইদুল ইসলাম মার্চ ১২, ২০২৫, ০৯:১৭ পিএম ধামইরহাটকে মডেল উপজেলা করা হলো না: ইউএনও মোস্তাফিজুর

নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলাকে মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলা হলো না উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোস্তাফিজুর রহমানের। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাতে বদলিজনিত বিদায় অনুষ্ঠানে উপজেলা পরিষদ নিজ কার্যালয়ে এক সৌজন্য সাক্ষাতকারের সময় গণমাধ্যম কর্মীদের এ কথা বলেন ইউএনও মোস্তাফিজুর। একজন গণমাধ্যম বান্ধব কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলার তিনটি প্রেস ক্লাবকে তিনি একত্রিত করেন এবং প্রেসক্লাবের বাইরে থাকা সাংবাদিকদেরও সমান গুরুত্ব দিয়ে একই চোখে দেখেছেন। উপজেলার উন্নয়ন ভাবনাসহ যেকোনো বিষয় সবার সাথে উন্মুক্তভাবে শেয়ার ও আলোচনা করে সবার মতামত নিতে চেষ্টা করেছেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ৩১ অক্টোবর ধামইরহাট উপজেলায় যোগদান করেন তিনি এবং চার মাসের মাথায় গত ৫ মার্চ বিভাগীয় কমিশনার রাজশাহীর এক আদেশ বলে তাকে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় বদলি করা হয়।
গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে আমরা দেখেছি তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনের একই সাথে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ক) ধামইরহাট পৌরসভার প্রশাসক, খ) ধামইরহাট উপজেলার প্রশাসক, গ) সহকর্মী কমিশনার ভূমি এর অতিরিক্ত দায়িত্ব এবং ঘ) উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্বসহ প্রায় ৫টি পদের দায়িত্ব সফলতার সাথে পালন করেছেন। 
গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে খোলামেলা আলাপকালে তিনি পৌরসভার আয় ব্যায়ের বিষয়ে বলেন, এর আগে যেখানে প্রতি মাসের পৌরকর আদায় হত গড়ে ৫ লাখ টাকার মত, সেখানে তিনি পৌর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর নভেম্বর মাসে আদায় করেছি ৯ লাখ ৫০ হাজার ৩০৮ টাকা, এছাড়াও ডিসেম্বর মাসে ৭ লাখ ৯৫ হাজার ২৩৫ টাকা, জানুয়ারি মাসে ১৫ লাখ ৭৮ হাজার ৩৯০, ফেব্রুয়ারি মাসে আদায় ১১ লাখ ৬১ হাজার ৫৩৮ এবং চলতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার ৭৮০ টাকা। গাণিতিকভাবে তুলনা করলে দেখা যায় যা এই পৌরসভার পূর্বের পৌরকর আদায়ের প্রায় ৩গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ এর মধ্যে দিয়ে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই আয় থেকে যেখানে পৌর মেয়রকে সরকারি সম্মানি ভাতা হিসেবে দিতে হতো মাসে ৪০ হাজার টাকা। সেখানে পৌর প্রশাসক হিসেবে এই সরকারি আয়ের ১ টাকাও  প্রতিমাসের আমাকে সম্মানী দিতে হয়নি। পুরো টাকাটাই পৌরসভার উন্নয়ন কাজে ব্যয় করার পথ প্রশস্ত হয়েছে। 
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থ বছরে উপজেলার আমায়তাড়া হাট-বাজার ইজারার প্রায় অর্ধেক টাকা বাকী ছিলো, যা তিনি পৌর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে আদায় করেছেন। এছাড়াও ধামইরহাট বাজারের ইজারা মূল্যের সরকারি নির্ধারিত দরের চেয়েও এই বছর প্রায় ১২ লাখ টাকা বেশি আদায় করা সম্ভব হয়েছে শুধু এই পৌর প্রশাসকের তৎপরতায়। এছাড়াও গত বছর এই পৌরসভার হাটের ইজারা থেকে প্রাপ্ত অর্থ ব্যাতীত অন্যান্য আয় ছিলো ১কোটি ১৫ লাখ টাকা সেখানে চলতি বছরের ৮ মাসেই অন্যান্য আয় হয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এটা শুধু এই পৌর প্রশাসকে তার বিভিন্ন রকম তৎপরতার কারণেই সম্ভব হয়েছে। 
এছাড়াও ইউএনও ও পৌর প্রশাসক আমাদের পৌরসভার জন্য ল্যান্ডফিল বা ময়লার ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। স্যারের বদলি জনিত বিদায়ের কারণে এই কাজগুলো হয়তো গতি হারাবে বা হয়তো হবেই না। ২০০৪ সাল থেকে এই পৌরসভা গঠিত হলেও ধামইরহাট পৌরসভার নিজেদের কোনো ভবন নেই। ফলে সেবা প্রার্থীদের স্থান অভাবে সঠিকভাবে সেবা দেওয়া যায় না। পৌর প্রশাসক স্যার জয়েন করার পরেই বিষয়টি অনুধাবন করে দ্রুত কিভাবে পৌরসভার নিজস্ব ভবন নির্মাণ করা যায় সেই উদ্যোগ গ্রহণ করেন। স্যারের বদলি হওয়ায় পৌরসভার নিজস্ব ভবন নির্মাণ কাজ অনেকটা পিছিয়ে যাবে।
পৌর বাসিন্দা মোখলেছুর রহমান বলেন, মাত্র চার মাসের মধ্যে উপজেলায় দুর্নীতি, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, অবৈধ পুকুর খনন, ইটভাটা নির্মাণ ও মাদকসহ অসংখ্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার মধ্য দিয়ে তিনি উপজেলায় মানবিক ইউএনও হিসেবে দুস্থ, অসহায় ও সাধারণ মানুষদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। হঠাৎ তার বিদায়ের কারণে এই কাজগুলো থমকে গেল।
মানব সেবার সভাপতি রাসেল মাহমুদ বলেন, প্রতি মাসের সপ্তাহে একদিন শুক্রবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ২০০ জন ভিক্ষুক ও প্রতিবন্ধীদের খাবারের আয়োজন করা হয়ে থাকে। বিষয়টি ইউএনও স্যার জানতে পেরে আমার সংগঠনের ভিক্ষুকদের মুখে নিজ হাতে খাবার তুলে দিতেন। 
তিনি আরও বলেন, দাপ্তরিক কাজের বাহিরে দুস্থ ও সাধারণ মানুষদের কাতারে গিয়ে নানান ধরনের সাহায্য ও সহযোগিতার মধ্যে অল্প সময়ে উপজেলা সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করছে সক্ষম হয়েছেন তিনি। এমন জনবান্ধব ইউএনও দেশের প্রতিটি উপজেলায় প্রয়োজন। তার অনাকাঙ্খিত বদলি জনিত বিদায়ের কারণে উপজেলার ভীষণ ক্ষতি হলো।
ইউএনও মোস্তাফিজুর বলেন, নওগাঁর ১১ তম উপজেলা হিসেবে ধামইরহাটকে এক নম্বর উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলায় ছিল আমার মূল লক্ষ্য। এরই ধারাবাহিকতায় অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল এ উপজেলাকে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে সাত জন নারীকে প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে সরকারি খরচে বিদেশে পাঠিয়েছি। যুবক এবং নারী খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে জেলা চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্সআপ অর্জন করা হয়েছে। বিভাগে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
এছাড়াও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা বিতর্ক প্রতিযোগিতায় জেলা এবং বিভাগে যেনো প্রথম স্থান অর্জন করতে পারে এ কারণে উপজেলা পরিষদ চত্বরে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস নেওয়া হয়। এতে করে শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক মানুষ হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার পাশাপাশি একজন ভালো বিতর্কিক হয়ে গড়ে উঠছিল।
তিনি আরও বলেন, উপজেলায় একটি পৌর ভবন এবং একটি বাস টার্মিনাল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা আমার ভীষণ ইচ্ছে ছিল। এ কারণে পরিদর্শন করে জায়গা নির্ধারণের কাজ চলছে এখন। এছাড়া উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে এবং প্রান্তিক আয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কিছুটা হলেও আর্থিক চাপ কমাতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ম শ্রেণিতে এই বছর ভর্তি হওয়া প্রায় ৩৫০০ জন শিক্ষার্থীদেরকে স্কুল ব্যাগ, খাতাসহ শিক্ষা উপকরণ দেবার জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছিলাম।  অন্য উপজেলায় যাওয়ার কারণে সম্ভবত এই উপকরণগুলো আর আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠছে না।

Side banner