গাইবান্ধা জেলা শহরের বাজার মনিটরিংয়ের সময় বাঁধা ও অনাকাঙ্খিতের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটতে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদের সভাপতিত্বে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। রবিবার (২৭ অক্টোবর) বিকালে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মতবিনিময় সভায় সভার শুরুতে ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ইং তারিখে বুধবার দারিয়াপুর বাজার মনিটরিং করে গাইবান্ধার পুরাতন বাজার এর শৃঙ্খলা দেখতে বাজার মনিটরিং কমিটি ও টাস্ফোর্স কমিটির আহবায়ক গাইবান্ধা জেলার অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট মো. মশিউর রহমান।
মতবিনিময় শুরুতে জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জেম আহমদের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর রহমানকে সেদিনের ঘটনা উপস্থাপন করতে বলেন। সেদিনের বাজার মনিটরিং কমিটির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, সেদিন ছিল বুধবার আমরা দাঁড়িয়াপুর বাজার মনিটরিং করে বিকেলে ফিরছিলাম বিকেলে ফেরার সময় পুরাতন বাজার ব্রীজ এ নেমে পুরাতন বাজরে ঢুকে অতিরিক্ত দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে পুরাতন বাজারে বাজার শৃঙ্খলা ও বাজার ব্যবস্থাপনা দেখার জন্য দেখতে যাই। বাজার মনিটরিং করতে বাধা সৃষ্টিকারীদের স্বার্থে ব্যাঘাতকারি গোষ্ঠী আমাদের বাজারে ঢুকতে দেখে আগে থেকেই পরিকল্পনা করে জনতাকে খেপিয়ে রেখেছিল। এক পর্যায়ে আমরা কয়েকজন বাজারের ব্যবসায়ীর কাছে বাজারের মূল্য ও সাধারণ ক্রেতা যাতে সমস্যায় না পড়ে সেজন্য বাজারে রাস্তাটিকে সচল রাখার নির্দেশ প্রদান করি। এক পর্যায়ে আমরা চলে আসার সময় বাজার কমিটির ইজারদারদের সঙ্গে বাক বিতন্ডে জড়িয়ে পড়ে তৃতীয় পক্ষ যারা বাজারের ব্যবসায়ী না, অথচ তারা বাজারে ব্যবসায়ীদের কাছে অন্যভাবে ব্যবসা করে থাকেন।
পরে বাজারে থাকতেই বাজারে ব্যবসায়ী সহ উৎসুখ জনতা বিষয়টি জানতে চাইলে বাজারের আরদ্দার মোহাম্মদ রিজু মিয়ার ঘরে বসে আলোচনা সাপেক্ষে আমরা চলে আসি। তারপর বাজার কমিটি ও তৃতীয় পক্ষ সাথে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে এর সঙ্গে আমরা কোনোভাবে জড়িত ছিলাম না বা আমাদের কোন কমিটির গায়ে বা কমিটি থাকাকালীন সময়ে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানো হয়নি। তবে তারা বারবার বাজার মনিটরিং এ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলো।
এই আলোচনার প্রেক্ষিতে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন, সেদিন আমি বদলি জনিত কারনে গাইবান্ধার বাহিরে ছিলাম। কিন্তু কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে ব্যাপারে প্রশাসন সর্বাত্মক সচেষ্ট থাকবে এবং বাজার মনিটরিং এর সময় একটি প্রশাসনিক টিম সব সময় থাকবে।
পুলিশ সুপার বলেন, যারা কৃষিপূর্ণ উৎপাদন করেন তারা কিন্তু প্রকৃত বেনিফিটটি পায় না। প্রকৃত বেনিফিট পায় মধ্যস্বত্বভোগী। বাজারের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদেরকে আরো সতেষ্ট হতে হবে যাতে প্রকৃত কৃষক প্রকৃত বেনিফিট পায়। এই ব্যাপারেও নজরদারি রাখতে হবে। যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে সে ব্যাপারে থানায় আমরা মামলাটি অন্তর্ভুক্ত করেছি।
গাইবান্ধায় সেনাবাহিনীর নবনিযুক্ত মেজর তার বক্তৃতায় বলেন, গাইবান্ধা একটি শান্তিপূর্ণ জেলা এখানে বড় ধরনের কোন সমস্যা এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে পরিলক্ষিত হয়নি। তবে যে কোন কারণে অনাকাঙ্খিত ঘটনা আর যাতে না ঘটে তথা পুনরাবৃত্তি না হয় সে ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট থাকব। সেই সঙ্গে গণমাধ্যম কর্মীদের ও সতেষ্ট থাকতে হবে ও নিউজ করতে এবং নিউজটি মিডিয়া প্রচার করায় আগে এমনভাবে নিউজ করতে হবে যাতে করে অনুসন্ধানীমূলক নিউজ হয় ও একটি জেলার সম্মান ক্ষুন্ন না হয়।
গাইবান্ধা জেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বর্তমান জামাতের আমির আব্দুল করিম বলেন, বাজারে ঢুকলেই দেখা যায় রাস্তাতে রাস্তা দখল করে কতিপয় ব্যবসায়ী নামধারী ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে থাকে। কিন্তু তাদের ওই ব্যবসার জায়গাটুকু এক ধরনের সিন্ডিকেট করে ব্যক্তিরা চাঁদা উঠিয়ে থাকেন তাদের স্বার্থে আতে ঘা লাগলে তারা এই অনাকাঙ্খিত ঘটনাগুলো ঘটিয়ে থাকেন। গাইবান্ধা একটি শান্তিপূর্ণ জেলা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে ব্যাপারে আমরাও সতর্ক থাকবো।
গাইবান্ধা জেলার স্থানীয় পত্রিকা মাদুকরের সম্পাদক ও ক্যাবের সভাপতি কে এম রেজাউল হক বলেন, বাজার মনিটরিং চলমান রাখতে হবে সাধারণ মানুষ বাজার করতে গিয়ে যাতে স্বস্তি পায় সিন্ডিকেটদের কবলে না পড়ে, স্বার্থন্বেষী মহলের কারণে বাজার মনিটরিং কখনোই বন্ধ রাখা যাবে না। কারণ একটি পণ্যই যদি এক টাকা করে কমে তাহলে ১০০০ মানুষ পণ্য কিনলে ১০০০ টাকা কম হয়। তাই সর্বক্ষণ বাজার মনিটরিং এ রাখতে হবে যাতে অসাধু কিছু ব্যবসায়ী বাজারে দাম না বাড়াতে পারে।
গাইবান্ধা জেলার অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেটের কথার সূত্রপাত ধরে বাজারের কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ রিজু মিয়া বলেন, আমাদের বাজারটি শুরু হয় একদম ভোরবেলা থেকে চলতে থাকে রাত বারোটা পর্যন্ত সুন্দরভাবে বাজার পরিচালিত হয়ে আসছে কিন্তু সেদিনের ঘটনাটি ছিল অনাকাঙ্খিত। আর যাতে অনাকাঙ্খিত ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারেও আমরা সতর্ক থাকবো।
বাজার ইজারাদার শোয়েব হক্কানী জানান, সেদিন বাজার মনিটরিং কমিটি বাজারে ঢুকলে ৮০% ব্যবসায়ী বাজার মনিটরিং এর পক্ষে ছিল কতিপয় অসাধু ২০% ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ীর মধ্যে পড়ে না অহেতুক ব্যক্তি তারাই একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বাজার মনিটরিং কমিটিকে কোন প্রকার আঘাত করা হয়নি কিন্তু আমাকে আঘাত করা হয়েছে কারণ আমি বাজার মনিটরিং কমিটির ম্যাজিস্ট্রেটসহ কমিটির সদস্যদের যাতে কেউ বাধা বা অকথ্য বা হুট করে কোন কিছু না করে সে ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলাম।
গাইবান্ধায় প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা বলেন, বাজারের বিষয়টি সরেজমিনে খতিয়ে দেখা হয়েছে। সেখানে প্রশাসনের কোনভাবে অপমান বা অপমানজনক কোন কিছুই করা হয়নি। যা ঘটেছে তা বাজারের মধ্যে বাজার ব্যবসায়ী ও ইজারাদারে মধ্যে ঘটনা ঘটেছে। কোনভাবে গাইবান্ধা জেলার যাতে সম্মান ক্ষুণ্ন না হয় ও এই তুচ্ছ অনাকাঙ্খিত ঘটনার কারণে সাধারণ মানুষ যাতে বাজার মনিটরিং থেকে বঞ্চিত না হয় সে ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে আবেদন জানায়।
সাংবাদিকরা আরও বলেন, গাইবান্ধা একটি শান্তিপূর্ণ জেলা ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমেদ ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন যে চালান রাখার জন্য। ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করার পরও বাজার মনিটরিং করার কথা জানা সত্ত্বেও বাজার মনিটরিংয়ে গেলে অনাকাঙ্খিত ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে আইনের বিধি মোতাবেক আইনানুক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে এতে সাধারণ ব্যবসায়ীর প্রতি যাতে কোন প্রভাব না পড়ে।
গাইবান্ধায় ছাত্র সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, কোন কারণে বাজার মনিটরিং রাখা বন্ধ রাখা যাবেনা। এতে করে নিম্ন আয়ের মানুষ যাতে বাজারে এসে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে ব্যাপারেও আমরাও মনিটরিং এ থাকবো এবং সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।
সব শেষে মতবিনিময় সবার সভাপতি গাইবান্ধা জেলার বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজম আহমদ বলেন, গাইবান্ধা জেলায় শান্তি ও বাজারে স্বস্তি ফেরাতে সব পেশাজীবীর মানুষকে সহযোগিতা করতে হবে। সরকারের একার পক্ষে বা প্রশাসনের একার পক্ষে বাজার মনিটরিং ও গাইবান্ধায় শান্তি শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব না। ইতোমধ্যে আমরা অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি গাইবান্ধা জেলাকে পরিচ্ছন্ন নগরী, গাইবান্ধা জেলাকে শান্তিপূর্ণ ও মেধাবীদের নিয়োগ প্রদানে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে। আপনারা সহযোগিতা করেন তাহলে গাইবান্ধায় সব সেক্টর থেকে দুর্নীতির শিখর উপড়ে ফেলানো সম্ভব হবে। গাইবান্ধার জেলা প্রশাসকের সংযুক্ত অনেক অফিসকেই চিঠি দেওয়া হয়েছে। মতবিনিময় করা হয়েছে তারা বলেছেন আমরা এখন থেকে আর কোন দুর্নীতি ও অসৎ উপায় অবলম্বন করব না। যারা অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত ও অপকর্ম এবং বাধার সম্মুখীন করেছে তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে এখানে নিরুপায় মানুষগুলো কোনভাবেই হয়রানির শিকার হবে না।
আপনার মতামত লিখুন : :